বিজ্ঞাপন

ঘরে দৈনিক ১১ ঘণ্টা কাজ করেন নারীরা, নেই মূল্যায়ন

May 1, 2024 | 1:09 pm

 জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রান্না করা থেকে শুরু করে সকল ধরনের গৃহস্থালি কাজ মূলত একাই করে থাকেন নারীরা। যার জন্য কোনো মজুরি বা মূল্যায়ন নেই তাদের। এক হিসেবে দেখা গেছে, একজন নারী দৈনিক প্রায় ১১ দশমিক ৭ ঘণ্টা ঘরের কাজে সময় দেন। যেখানে একজন পুরুষ এ কাজে ব্যয় করেন প্রায় ১ দশমিক ৬ ঘণ্টা। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীরা ঘরের কাজে ৮ গুণের বেশি সময় দেন। কিন্তু এ কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই। এমনকি বিদ্যমান শ্রম কাঠামোতে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন সময় এ কাজের হিসাব জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেন্ডার সমতায় ‘মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজ’ বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ টাইম ইউজ সার্ভের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে বিভিন্ন সময় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘নারীরা ঘরের যে ব্যাপক কর্মঘণ্টা দিচ্ছেন সেটির হিসাব হওয়া উচিত। কাঠামোগত কারণে জিডিপিতে যুক্ত করা না গেলেও হিসাব করে দেখতে চাই, জিডিপিতে নারীদের গৃহস্থালি কাজের অবদান কত।’ কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘টাইম ইউজ সার্ভে ২০২১’র তথ্যমতে, মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজে ২৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীরা দিনে ব্যয় করেন ৫ দশমিক ২ ঘণ্টা। একই বয়স সীমার মধ্যে পুরুষরা এই ধরনের কাজ করেন শূন্য দশমিক ৬ ঘণ্টা। গ্রহস্থালি কাজ ছাড়াও শিশু ও বৃদ্ধদের দেখাশোনা করতে হয় নারীদের। এতে করে নারীদের দৈনিক ১১ দশমকি ৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ ধরনের কাজ অনুৎপাদনশীল হিসেবে গণ্য হওয়ায় এর কোনো স্বীকৃতি বা মজুরি নেই। উৎপাদনশীল কাজ হিসেবে স্বীকৃত কাজে নারীদের সময় ব্যয় হয় ১ দশমিক ২ ঘণ্টা। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটা ৬ দশমিক ১ ঘণ্টা। ঘরের কাজ করা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উভয়ের সমান দায়িত্ব হলেও নারীদেরকেই এর ভার বহন করতে হয়।

এদিকে শহর এলাকায় গৃহস্থালি কাজে নারীরা সময় ব্যয় করেন ৪ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও পুরুষরা ব্যয় করেন শূন্য দশমিক ৬ ঘণ্টা। গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের কাজে নারীরা ব্যয় করেন ৪ দশমিক ৭ ঘণ্টা এবং পুরুষরা ব্যয় করেন শূন্য দশমিক ৬ ঘণ্টা। এছাড়া যেসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তারা ঘরের কাজে সময় দেন ৪ দশমিক ১ ঘণ্টা। প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে এই সময়টা ৪ দশমিক ৯ ঘণ্টা এবং মাধ্যমিক ও তার ওপরের শিক্ষা নেওয়া নারীরা যথাক্রমে ৪ দশমিক ৯ ঘণ্টা ও ৪ দশমিক ৩ ঘণ্টা সময় দেন।

বিজ্ঞাপন

এই প্রতিবেদনে শুধু কাজের ক্ষেত্রেই নয় সুযোগ-সুাবধার ক্ষেত্রেও নারী-পুরুষের বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠে। এতে বলা হয়েছে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ব্যক্তির মোবাইল ফোন কেনার সঙ্গতি থাকলেও নারীদের মধ্যে মাত্র ৫৯ দশমিক ৯২ শতাংশের নিজের মোবাইল ফোন ছিল। এক্ষেত্রে পুরুষের হার ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের ২৮ দশমিক ০৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে পুরুষ ৩৫ দশমিক ১৫ শতাংশ ও নারী ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রী থাকাকালে নারীদের গৃহস্থালি কাজ নিয়ে বিআইডিএসকে দিয়ে একটি গবেষণা করিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে, জিডিপির ১৮ ভাগ অবদান হচ্ছে নারীদের। এখন জিডিপি হচ্ছে ৪৪৫ বিলিয়ন ডলার। নারীদের এসব কাজের অবদান যোগ হলে সেটি ৬০০ বিলিয়ন ডলার হতো। কিন্তু আর্ন্তজাতিকভাবে যেহেতু এই হিসাব এখনো জিডিপিতে যুক্ত করা হয় না, সেহেতু আমরাও করিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিআইডিএসের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। আগামীতে হয়তো এই অবদান যোগ হবে। ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশ জিডিপিতে সরাসরি নারীদের এসব কাজের অবদান জিডিপিতে যোগ না করলেও আলাদা হিসাব রাখে। আমাদের দেশেও সেটি করা উচিত।’

জানতে চাইলে বিবিএসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০৮ সালের সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস (এসএনএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, জিডিপি হিসাবের সময় নারীদের গৃহস্থালি কাজের হিসাব করার নিয়ম নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো কাজও শুরু হয়নি। তবে ২০২৫ সালের এসএনএ তৈরির সময় হয়ত বিষয়টি যুক্ত হতেও পারে। কেননা জাতীয় ও আন্তজাতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে বলে শুনেছি।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন