বিজ্ঞাপন

তাপপ্রবাহেও খুলল স্কুল, অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

May 4, 2024 | 2:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমত পাঠদান করতে পারছিল না। কয়েক দফা ছুটি থাকার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (৪ মে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। যদিও বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ ঘণ্টায় যশোরে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ পরিস্থিতি আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে স্কুল খোলা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন, এখনও তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় খোলা রাখায় স্কুলে যেতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

আবার কোনো কোনো অভিভাবক বলছেন, দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ থাকলে বাচ্চারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৪ মে) রাজধানীর বেশ কয়েকটি কিছু স্কুল ঘুরে দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা যথাসময়েই বিদ্যালয়ে পৌঁছেছেন এবং ক্লাস করেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সঙ্গেই তাদের অভিভাবক ছিলেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজীদ আহমেদের মা সারাবাংলাকে বলেন, বাইরের আবহাওয়া এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বড় মানুষ এই রোদে ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছে সেখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের ইউনিফর্ম পড়ে স্কুলে নিয়ে আসা কঠিন।

বিজ্ঞাপন

গরমের মধ্যে স্কুল খোলা রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মেহজাবিন নামের এক অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেন, যেই গরম এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির একটা বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে আসা ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চারাতো এত গরম সহ্য করতে পারছে না, ঘরে ঘরে অসুস্থ হচ্ছে। আগে জীবন পরে পড়াশুনা। আজকের দিনে স্কুল খোলা রাখার কী দরকার ছিল?

তবে ভিন্ন মতামতও রয়েছে। মতিঝিল বালক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মতিউর রহমান বলেন, আমি তো মনে করি সরকার ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। যে দেশে বছরের আট মাস গরমকাল থাকে, সেখানে এতটুকু গরম তো সহ্য করা যায়। এভাবে স্কুল বন্ধ থাকলে বাচ্চারা তো পিছিয়ে পড়বে।

একই সুরে কথা বললেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তালহার মা সুরাইয়া বেগম। তিনিও স্কুল খোলার রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ স্কুলই শনিবার খুলেছে। ভিকারুন্নেছা নুন, টিএন্ডটি, সিদ্ধেশ্বরী বালক, বালিকা, মতিঝিল আইডিয়াল, শেরই বাংলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেচ্ছা বিদ্যালয়, শহীদ নবী বিদ্যালয়গুলোতে সকালে ক্লাস নিতে দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে কামরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাজিয়া পারভীন সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনেই পাঠদান শুরু করা হয়েছে। পাঠদান শুরু করলেও আমরা সব শিক্ষার্থীকে ব্যাগে পানি, ছাতা রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। অকারণে রোদে ঘোরাঘুরি না করে ছায়া স্থানে থাকার কথা বলছি।

একসময় দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি বলতে শুধু শুক্রবার ছিল। তবে বৃহস্পতিবার ছিল হাফ স্কুল। করোনার পর ২০২৩ সাল থেকে শুক্র ও শনিবার দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি করা হয়। এরপর থেক শুক্র-শনি দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। টানা দেড় বছর পর ৪ মে থেকে ফের শনিবারে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষন পিছিয়ে যাবে বলেই শনিবারে পাঠদান করে কভার করা হচ্ছে। যদিও এ নিয়েও অভিভাবকদের মধ্যে মত দ্বিমত দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পদ্ধতিতে নিয়ে গেছে, যখন ইচ্ছা পরিবর্তন করবে। শিক্ষার্থীদের কোনো চিন্তা নেই।

মতিঝিল বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিনথিয়ার বাবা খলিলুর রহমান বলেন, সাধারণ এই বিষয়টা নিয়ে দেখুন। তাপমাত্রা বেশি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না স্কুল খোলা রাখবেন নাকি বন্ধ রাখবেন।
আজ ২৫ জেলায় স্কুল বন্ধ। বাকি জেলায় স্কুল খোলা। তাহলে কি ওই ২৫ জেলার বাচ্চারা পিছিয়ে পড়বে না। এসব আজগুবি সিদ্ধান্তের কোনো মানে হয়?

একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়ার বাবা শওকত হোসেন বলেন, হয়তো রোববার আবার সিদ্ধান্ত দেবেন যে রবি, সোম বন্ধ। আবহাওয়া অধিদফতর তো জানেই আগামী এক মাসে কবে কী হবে। তারপরেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা এসব পরিস্থিতি দেখছি।

এর আগে দেশে চলমান তাপদাহের কারণে আবহাওয়া পূর্বাভাসের ভিত্তিতে ৩ মে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলার, ঢাকা বিভাগের ঢাকা ও টাঙ্গাইল জেলার, চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার এবং রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪ মে তারিখ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, শব-ই বরাত, পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা বর্ষবরণ শেষে গত ২১ এপ্রিল স্কুল খোলার কথা ছিল। কিন্তু দেশজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে পরবর্তী সাত দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। যা শেষে রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠ দান শুরু হয়। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অ্যাসেম্বলি বন্ধ ঘোষণা করে ক্লাস শুরু হলেও চলমান তাপপ্রবাহের কারণে দুই দিন পর হাইকোর্টের নির্দেশে ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দেশজুড়ে এখনো তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করায় দেশের পাঁচ বিভাগের ২৫ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪ মে বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

সারাবাংলা/জেআর/এনইউ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন