বিজ্ঞাপন

‘ভেবেছিলাম বাবা-মায়ের মুখ আর দেখা হবে না’

May 15, 2024 | 7:57 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম বাবা, মা ও আত্মীয়স্বজনদের আর দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলতাম; হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। মহান আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বুধবার (১৫) সকালে বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলেন নাবিক নাজমুল হক।

তিনি বলেন, এই আনন্দের প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। বাড়িতে ফিরতে পেরেছি, পরিবারকে কাছে পেয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। বেশ কিছুদিন বাড়িতে থাকব। কোরবানি ঈদের পর আবারও জাহাজে ফিরব।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে উপজেলার চর নূরনগর গ্রামের আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পত্তির ছেলে নাজমুল হক। তিনি বাড়ি ফিরলে পরিবার, আত্মীয় স্বজন এবং গ্রামবাসী তাকে বরণ করে নেয়। তার ফেরার মধ্য দিয়ে স্বজন-পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পান।

বিজ্ঞাপন

মুক্তির পর থেকে শুরু হয় মা-বাবার বুকে ফেরার অপেক্ষা। বুধবার মা-বাবা তাদের বুকের মানিককে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন আল্লাহর দরবারে।

আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পত্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাবিক নাজমুলকে তার বাবা-মা বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। তাদের চোখেমুখে সন্তান ফিরে পাওয়ার আনন্দ। ছেলেকে পাওয়ার পর বাবা-মায়ের খুশি যেন আর ধরে না। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে ছেলে নাজমুলও খুব উচ্ছ্বসিত।

বিজ্ঞাপন

নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কিনা এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চাইছিল না। নাজমুল অপহৃতের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজমুলের বাবা। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। ঈদের দিন কিভাবে কেটেছে বলতে পারব না। ছেলে বাড়িতে ফিরে এসে। আমরা আজকে ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব।

বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে নাজমুল হক বলেন, জিম্মির ওই প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিত জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। আজ এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। শুধু বলতে চাই, মা-বাবাকে কাছে পেয়েছি, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়।

জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। চুনাপাথর বোঝাই শেষে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে জ্বালানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল দেশের পথে পাড়ি দিতে শুরু করে এমভি আব্দুল্লাহ।

জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির একমাস পর ১৩ মে দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সেটা কুতুবদিয়ায় পৌঁছে নোঙর ফেলে। জাহাজটিতে নতুন নাবিক পাঠানো হয়। লাইটারেজ জাহাজে চড়ে নতুন নাবিকদের একটি দল জাহাজটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন ওই ২৩ নাবিক।

নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন