বিজ্ঞাপন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে বাজেটে

May 25, 2024 | 7:32 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : আগামী ৬ জুন (বৃহস্পতিবার) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি হবে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। আসছে বাজেটে চার বছর পর আবারও কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) সাদা ( বৈধ করার) করার সুযোগ থাকছে। এই বাজেটে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। চার বছর বিরতি দিয়ে এবার ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছিল এটি ছিল দেশের ইতিহাসে যে কোন অর্থবছরে সর্বোচ্চ কালো টাকা সাদা করার ঘটনা। এ থেকে সরকার ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন তাদের ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এর পরের বছর কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে সাড়া না পাওয়ায় এ সুবিধা বাতিল করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সে সুযোগও কেউ গ্রহণ করেনি। তাই পরের অর্থবছর এ সুযোগ আর রাখা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। ১৫ শতাংশ করা দেওয়া হলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মিলবে। আর এইক্ষেত্রে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুরনো আয়কর আইনের ১৯এ ধারা বর্তমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ পদ্ধতিতে কর দিয়ে টাকা বৈধ করলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা উৎস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।

জানা গেছে, আয়কর আইন অনুযায়ী যে কোনো করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পান। তবে এর বাইরে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর পরিশোধ করেও টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট যে কোনো সংস্থা চাইলে পরে ওই টাকার উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। তবে এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুরোনো আয়কর আইনের ১৯এ ধারা বর্তমান আইনে অন্তর্ভুক্ত করে এই আইনে কর দিয়ে টাকা বৈধ করলে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা উৎস নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর থেকে নানাভাবেই কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা সাদা করা হয়। যা থেকে তৎকালীন সরকার মাত্র ১৯ লাখ টাকা আয়কর পায়। ১৯৭৬-৮০ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা সাদা করা হয়। এতে সরকার কর পায় ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১-৯০ পর্যন্ত ৪৫ কোটি টাকা সাদা হয়, যাতে আয়কর পায় চার কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৫ কোটি টাকা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কালো টাকা সাদা হওয়ার পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত তিন বছরে ৯৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং আয়কর আদায় হয় ১৪১ কোটি টাকা। ২০০১-০৭ পর্যন্ত ৮২৭ কোটি টাকা, ২০০৭-০৯ পর্যন্ত এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, ২০০৯-১৩ পর্যন্ত এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৩-২০ পর্যন্ত ১১ হাজার ১০৭ কোটি কালো টাকা মূল ধারার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় যথাক্রমে ১০২ কোটি, ৯১১ কোটি, ২৩০ কোটি ও এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ফলে আগামী বাজেটের আকার চলতি বাজেট থেকে ৩৫ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি হচ্ছে। আগামী বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)।

এ ছাড়াও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন