বিজ্ঞাপন

কোরবানির চামড়ার মৌসুমি ক্রেতা নেই, দানই ভরসা

June 17, 2024 | 8:19 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এবারও রাজধানীতে মহল্লাভিত্তিক কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করার জন্য কোনো মৌসুমি ক্রেতার সন্ধান মিলেনি। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে কিংবা পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে মসজিদ-মাদরাসায় চামড়া দান করছেন কোরবানিদাতারা।

বিজ্ঞাপন

অথচ কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে এক সময় রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী হিসেবে তরুণদের প্রভাব থাকত। যার যে এলাকায় যাদের প্রভাব বেশি, তিনি ওই এলাকা থেকে বেশি চামড়া কিনতে পারতেন। এলাকায় চামড়া কিনতে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেরও খবর পাওয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিত্র ভিন্ন। এখন চামড়া বিক্রি করার মতো রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ীর দেখা মেলে না। এবারও একই চিত্র।

ফলে অধিকাংশ রাজধানীবাসী ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় কোরবানির চামড়া বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় দান করে দিচ্ছেন। রাজধানীর প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা ভ্যানে করে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করছেন।

সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর মতিঝিল, মগবাজার, পুরানা পল্টন, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর, শ্যামলী এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, টানা কয়েক বছর চামড়া কিনে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়ায় এখন আর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া কিনতে দেখা যায় না। কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ও খবর নিয়ে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফলে তাৎক্ষনিক চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না কোরবানিদাতাদের। তাদের অভিমত চামড়ারে যেহেতু কোন ক্রেতা নেই, সুতরাং মসজিদ-মাদরাসায় দান না করলে এই চামড়া পচে নষ্ট হয়ে এলাকার পরিবেশ দূষিত হবে।

এ ব্যাপারে মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে এক বাউন্ডারির ভেতর পাঁচটি ভবনে চারশোর বেশি পরিবার বসবাস করে। বরাবরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। আমরা কারো আসার প্রত্যাশাও করিনি। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার গরু স্থানীয় গোলাপশাহ মাজার সংলগ্ন মসজিদে দান করে দিয়েছে। মাদরাসার ছাত্ররা এসে চামড়া নিয়ে গেছেন।

একই কথা বলেন শাহজাহানপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এখন আর কেউ চামড়া কিনতে আসে না। সবাই চামড়া নিকটবর্তী মসজিদ মাদরাসায় দান করে দিচ্ছেন। এটা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এমন এক সময় ছিলে যখন কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য মহল্লায় মহল্লায় তরুণদের মধ্যে রীতিমতো মারামারি হতো। কে কোন এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে চামড়া কিনবে তা নিয়ে টেন্ডারবাজির মতো বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেত। তখন চামড়ার দামও ছিল প্রচুর। প্রতিটি গরুর চামড়া আড়াই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হতো।

অন্যদিকে, মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, চামড়া বিক্রি করা হয় না। স্থানীয় মাদরাসায় দিয়ে দেই। মজার বিষয় শুনেছি কেউ একজন নাকি চামড়া কিনতে এসেছিল, দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া ৪০০ টাকা বলেছে। বিক্রি করা হয়নি, কারণ তা মসজিদে দান করা হবে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রাস্তার মোড়ে এনে বিক্রি করার জন্য জমা করেছেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে তাদের। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসায় কাঁচা চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। পরে সেখান থেকে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হবে।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা জাফর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রতি বছর চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়লেও কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। সরকারও সব সময় ব্যবসায়ীদের কথা শুনেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সাধারণত কোরবানির ঈদের দিন কাঁচা চামড়া কিনি না। ঈদের কয়েক দিন পর আমরা লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ শুরু করি। তবে এই সময় বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসা থেকে কিছু কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন চামড়ার নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

সারাবাংলা/জিএস/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন