বিজ্ঞাপন

ঈদের দিনে প্রতি ৩ মিনিটে একজন পঙ্গুর জরুরি বিভাগে

June 17, 2024 | 8:59 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদুল আজহার প্রধান অনুষঙ্গ পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হয়ে প্রতি তিন মিনিটে এক জন করে রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) জরুরি বিভাগে। পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগটির তথ্য বলছে, ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। তাদের বেশির ভাগই ঈদুল আজহার দিনটিকে পশু কাটাকাটি তথা কসাইয়ের কাজ নিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই কোরবানি দিতে গিয়ে নানাভাবে আহত হয়েছেন। কেউ কোরবানির পশু জবাই দেওয়ার সময় ছুরি-চাপাতি চালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। আবার কেউ পশুর আঘাতে আহত হয়েছেন। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চাপও বেড়েছে নিটোরে। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত সব সেবাই দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল ১১টার দিকে নিটোর ঘুরে দেখা যায় কোরবানি দিতে গিয়ে আহত মানুষদের ভিড়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোড থেকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন নাজমুল হক (২৯)। পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও কোরবানির গরু কাটাকুটি করে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় কাজ করছিলেন। তবে চামড়া আলাদা করতে গিয়ে ছুরির আঘাতে হাতের কবজি কেটে যায় তার। প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলেও সেখানে চিকিৎসক না পেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও কাউকে কাউকে অস্ত্রোপচারও করতে হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

মুন্সীগঞ্জের মো. মোক্তার হোসেনও কোরবানির ঈদে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় রাজধানীর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় পশু কোরবানি ও মাংস তৈরির কাজ নিয়েছিলেন। তারও বিধিবাম! গরুর গলায় ছুরি চালানোর সময় কেটে ফেলেন নিজের ডান হাতের ধমনী। নিটোরের জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে তাকে সেলাই দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেল।

বিজ্ঞাপন

এ সময় অস্ত্রোপচার কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সায়েম আলম। অস্ত্রোপচার কক্ষের বাইরে অপেক্ষারত তার স্ত্রী নাইমা খাতুন বলেন, সাঁতারকুল এলাকায় গরু কোরবানি করতে গিয়ে আহত হন সায়েম। গরুকে শোয়ানোর সময় গরু লাথি দিলে বাম উরুতে আঘাত পান তিনি। এখন প্লাস্টার করতে হচ্ছে।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৫০ জন রোগী এসেছেন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। কিছু রোগীকে সাধারণ চিকিৎসা দিলেই হয়। কাউকে কাউকে অস্ত্রোপচারও করতে হয়। মাইনর অপারেশন হলে অপারেশনের পর যেসব রোগী হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, তাদের আমরা রিলিজ দেই। গুরুতর রোগীদের ভর্তিও দিতে হয়।

এই চিকিৎসক বলেন, ঈদ হোক বা সরকারি ছুটি— সবসময়ই এখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে রোগীদের চাপ সার্বক্ষণিক। তার কারণও আছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে সবাই ভরসাস্থল মনে করেন। আমরাও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সবাই মিলে সর্বোচ্চ দিয়ে সেই ভরসা রাখার চেষ্টা করি। ঈদের দিন হলেও চারজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন জরুরি বিভাগে। আরও চারজন জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্ব পালন করছেন। অ্যানেস্থেশিয়ার চিকিৎসক এবং নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের জরুরি বিভাগের তিনটি অপারেশন থিয়েটার সবসময় প্রস্তুত থাকে। কোরবানির ঈদে যারা সেবা নিতে আসেন তাদের অধিকাংশকেই অপারেশন থিয়েটারে পাঠাতে হয়। কারও কারও অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর থাকে। আমরা চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কোনো চিকিৎসকই চাইবে না রোগীর সংখ্যা বাড়ুক। আর তাই চিকিৎসক হিসেবে আমরা সবাইকে সচেতন থেকে ঈদের আনন্দ পালন করার অনুরোধ জানাই।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন