বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল

June 18, 2024 | 9:25 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন। কড়া রোদে প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। ঈদের ছুটিতে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছুটে বেড়াচ্ছে সবাই। বিশেষ করে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানায়। প্রবেশ থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রাণীদের খাঁচাগুলোর সামনেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে দর্শনার্থীদের নিজেদের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ জুন) জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেল এমন চিত্রই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকাল ৮টা থেকেই চিড়িয়াখানার প্রবেশ পথগুলোতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। বেলার বাড়তে বাড়তে সে লাইনের দৈর্ঘ্যও বাড়তে থাকে। প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করেই সবাই যে যার মতো চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়াতে থাকেন।

চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, জলহস্তী, বানর, ক্যাংগারু, কুমির, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ুরের খাঁচায় দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। চিড়িয়াখানার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানালেন, ঈদুল আজহার দ্বিতীয় এই দিনে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। গরমের তীব্রতা কম হলে এবং আবহাওয়া ভালো থাকলে দর্শনার্থী আরও বেশি হতো বলে মনে করছেন তিনি।

চিড়িয়াখানায় হাতির খাঁচার সামনে সবসময় ভিড় থাকে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

মঙ্গলবার চিড়িয়াখানা এলাকায় পৌঁছে দেখা যায়, প্রবেশ গেটের অনেকটা দূর থেকেই গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে গাড়ি থেকে নেমে দর্শানার্থীদের অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে হচ্ছে চিড়িয়াখানায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড গরমে এই পথটুকু হাঁটতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। তবে চিড়িয়াখানায় ঢুকে বিভিন্ন প্রজাতির ‘চিড়িয়া’ দেখতেই উধাও হয়ে যাচ্ছে সেই ক্লান্তি।

বিজ্ঞাপন

দিনভর চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতো এবারও দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাঘ, হাতি, চিতা, ভল্লুক, বানর ও উল্লুক। এসব প্রাণীর খাঁচার সামনে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। এ ছাড়া মাস তিনেক আগেই চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছে দুটি ব্যাঘ্রশাবক। ঈদ সামনে রেখে সেগুলোকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সেই দুটি বাঘের বাচ্চা ঘিরে দর্শকদের আলাদা ভিড় লক্ষ করা গেছে।

বিশেষ করে বেশি ভিড় দেখা যায় শিশুদের পার্কের সামনে। বিভিন্ন রাইড আর টয় ট্রেনে জায়গা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

হরিণের খাচাগুলোতে পূর্ণবয়স্ক হরিণ ছাড়াও বিভিন্ন বয়স হরিণছানা খেলা করছিল আপনমনে। তাদের সেই কসরৎ আনন্দ দিয়েছে দর্শনার্থীদের। পাশাপাশি পেলিক্যান, লামা, ক্যাংগারু ও আফ্রিকান সিংহের ছোটাছুটি মুগ্ধ করেছে নজর কেড়েছে সবার। আর চিড়িয়াখানার পার্কে শিশুদের ট্রেন ভ্রমণের সঙ্গে বিভিন্ন দোলনায় চড়ার আনন্দ তো ছিলই। ওই অংশের দিকে ছোটদের টানটা একটু বেশিই দেখা গেল।

বিকেলে নিজ কার্যালয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার কথা বললেন সারাবাংলার সঙ্গে। ঈদের দ্বিতীয় দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন চিড়িয়াখানায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। তবে আমরা আশা করেছিলাম এই সংখ্যা আজ এক লাখ পেরিয়ে সোয়া এক লাখের মতো হবে। আসলে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কাও আছে। সে কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেই চিড়িয়াখানা লোকে লোকারণ্য হয়েছে ঈদের ছূটিতে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে কম হলেও দর্শনার্থীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তারা শান্তিপূর্ণভাবেই পশুপাশি দেখছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পার্কিং এলাকায় যেন কোনো ধরনের জটলা না হয় সে কারণে কিউয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বড়ও করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার ভেতরে পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও আনসার এবং আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করছেন।

দর্শনার্থীদের জন্য সুব্যবস্থার কথা জানিয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির ব্যবস্থা এবং সাময়িক বিশ্রামের জন্য ছাউনি রাখা রয়েছে। দর্শনার্থীরাও যেন প্রাণীদের বিরক্ত করতে না পারে, আমাদের কর্মীরা সেদিকেও খেয়াল রেখেছেন। সব মিলিয়ে এবার ঈদে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরা আগের চেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন, পাচ্ছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চিড়িয়াখানায় নতুন কোনো প্রাণী আনা হয়েছে কি না— জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে নতুন কোনো প্রাণী আনা হয়নি। তবে কিছু প্রাণী আনার জন্য টেন্ডার দিয়েছি। বাজেটের চেয়ে দাম বেশি হওয়ায় তা চূড়ান্ত করা যায়নি।

ভিড়ের শুরুটা অবশ্য চিড়িয়াখানার প্রবেশপথ থেকেই। সেখানেও দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন ছিল সকাল থেকে। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে সপরিবারে চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন জসিম উদ্দিন সরকার। তিনি সরাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলেন বয়স সাত বছর। তাকে পশুপাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সপরিবারে চিড়িয়াখানা এসেছি। সে চিড়িয়াখানায় এসে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে বেশ আনন্দ পাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

সাভার থেকে থেকে চিড়িয়াখানায় আসা সুমি বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি। বাচ্চারা বেশ মজা পাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরম ও ভিড় থাকায় খাঁচার কাছাকাছি গিয়েও প্রাণীগুলোকে ঠিকমতো দেখাতে পারছি না। এটা ভিড়ের কারণে হচ্ছে।’ অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পবিবেশ ভালো। আগের মতো হকারদের কোনো উৎপাত নেই। কোনো সমস্যা হয়নি।’

রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬১ সালে। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানায় এখন ১৩৭ প্রজাতির তিন হাজার ২৭৫টি প্রাণী রয়েছে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন