বিজ্ঞাপন

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে যে ‘স্পষ্টীকরণ’ ব্যাখ্যা পেনশন কর্তৃপক্ষের

July 2, 2024 | 10:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম নিয়ে আন্দোলন করছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দুই দিন হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া প্রত্যয় স্কিম নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ জুলাই) গণমাধ্যমে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয়-এর শুভযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের স্পষ্টীকরণ’ শিরোনামে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয়’ স্কিম যাত্রা শুরু করেছে। সমাজের সব স্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং এর অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে।

পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশনব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) অধীন। এই সুবিধার অধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, কোনো পেনশন পান না। তাছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতাবহির্ভূত। ফলে সরকার সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তন করেছে।

প্রত্যয় স্কিমের কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন তারা আগের মতো পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

বিজ্ঞাপন

পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেম পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। ১ জুলাই ২০২৪ সাল থেকে ফান্ডের ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি সিস্টেম পেনশনব্যবস্থা চালু হবে। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা (যেটি কম হবে) তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে নেবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এরপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা, কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেম দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই নয় উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন ও বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে বিধায় এটি দীর্ঘ মেয়াদে একটি টেকসই পেনশনব্যবস্থা। পাশের দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন পান। ফলে সেটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। সে ক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও এর পরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, কেবল তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকদের বয়সের বিষয়ে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়ার উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন। ৬৫ বছর থেকে তারা আজীবন পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে। পাশাপাশি লাম্প গ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে তা বহাল থাকবে।

আনুতোষিকের পরিবর্তে মাসিক পেনশনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এককালীন নয়, বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য বলে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েক গুণ বেশি মাসিক পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক ৫০০০ টাকা বেতন থেকে কেটে নেওয়া হলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে এক লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি ১৫ বছর ধরে পেনশন পেলে তার মোট প্রাপ্তি হবে দুই কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা, যা তার জমার প্রায় সাড়ে ১২ গুণ। পেনশনার পেনশনে যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

নমিনিদের পেনশনের প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেনশনারের স্ত্রী বা স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থাতেও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী বা স্বামী বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন পেনশনার অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় পাঁচ বছর পেনশন পেয়ে তারপর মারা গেলে তার স্ত্রী বা স্বামী বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।

নতুন পেনশন ব্যবস্থাপনার ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন (ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশন ও ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট) নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন