বিজ্ঞাপন

‘৬ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে’

July 2, 2024 | 10:27 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আগামী ৬ জুলাই চট্টগ্রামের জনসমাবেশ থেকে নতুনভাবে আন্দোলনের সূত্রপাত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে শ্রমিকদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের মানুষের অধিকার একই সূত্রে গাঁথা মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের গতকাল (সোমবার) একটি জনসভা ছিল। বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে সেটা ৬ জুলাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি শ্রমিকদের অনুরোধ করব, এ সভাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দু’টি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে- গণতন্ত্রের মা’র মুক্তি, অন্য একটি দেশের মানুষের অধিকার।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মায়ের মুক্তির সঙ্গে দেশের মানুষের অধিকার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এটাকে আলাদা করা যাবে না। এ দেশের মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্রের মায়ের মুক্তি একইসূত্রে গাঁথা। চট্টগ্রামে শনিবারের (৬ জুলাই) যে জনসভা, সেটা থেকে নির্বাচনের পরে আমরা যে আন্দোলন শুরু করছি তা নতুনভাবে সূত্রপাত হবে।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমান শ্রমিক নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শ্রমিক সংগঠনগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারছে না। যে সমস্ত শ্রমিকনেতা গার্মেন্টস সেক্টরে দাবি নিয়ে সত্যিকার অর্থে কাজ করেছিল তাদের অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। তাদের অনেকের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা নেতৃত্বে আছেন তারা প্রকৃতপক্ষে সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে পাওনা সেটার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা কিন্তু বলেছিলাম ২৫ হাজার টাকা গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য। শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও এ টাকার দাবি দেওয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। কিন্তু তাদের বেতন সাড়ে ১২ হাজার।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গার্মেন্টস সেক্টরে সত্যিকার অর্থে দাবি আদায় করার কোনো নেতা পাচ্ছে না। একজন শ্রমিক সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে চলা সত্যিকার অর্থে খুবই কঠিন। কোনো সুযোগ নেই সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি পরিবার চলার। কিন্তু সে কাজটা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘যারা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে তাদের পক্ষে অবস্থান নেবে সে রাজনীতিবিদ এখন কিন্তু আর নেই। রাজনীতিবিদ যারা এমপি-মন্ত্রী হচ্ছে, তারা লুটপাটের রাজনীতির একটি অংশ। বর্তমান সরকার যে লুটপাট করছে তার অংশ হিসেবে কিন্তু এ লোকগুলো রাজনীতিতে এসেছে। এদের সঙ্গে রাজনীতি ও জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এদের ভোটের ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে এদের দায়বদ্ধতা নেই। তাদের মাধ্যমে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি সেটা কখনও পূরণ হবে না। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না তারা শ্রমিকদের কাছে কী জবাবদিহি করবে।’

জনগণের নির্বাচিত সরকার সংসদে না থাকার কারণে শ্রমিকদের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে না অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, ‘শ্রমিক, মালিক ও সরকারের যে সম্পর্ক নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের নির্বাচিত সরকার সংসদে না থাকার কারণে আজ শ্রমিকদের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে না। অথচ একটি দেশের প্রোডাকশনের যে মূল বিষয় সেখানে শ্রমিক অন্যতম।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকের কল্যাণ যত কম সাধিত হবে, উৎপাদন ব্যবস্থা তত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমরা যে আন্দোলনে নেমেছি সেখানে অন্য সবগুলোর সঙ্গে শ্রমিকের স্বার্থ গভীরভাবে জড়িত। শ্রমিকের স্বার্থ যদি আমাদের উদ্ধার করতে হয় আন্দোলনে কিন্তু সফল হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘৩১ দফা যেটা করা হয়েছে সেটা সবার সঙ্গে বসে করা হয়েছে। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। শুধু শ্রমিকের দাবি নয়, বাংলাদেশের সকল মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য ৩১ দফায় সব বলা হয়েছে। এটা বিএনপির একার কোনো দাবি নয়। এটা সমস্ত বিরোধীদল, বামপন্থী, ডানপন্থী, মধ্যপন্থী সবাই কিন্তু একমত হয়ে এ ৩১ দফা প্রণয়ন করেছে।’

‘ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করলেই বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হবে না। ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করার পর আমরা যদি সাধারণ মানুষের এ দাবিগুলো পূরণ করতে না পারি, জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে না পারি তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সেটা যদি পূরণ করা না যায় আন্দোলন সংগ্রাম করে লাভ কী। কোনো লাভ নেই। এ আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপুর্ণ’- বলেন আমীর খসরু।

বিভাগীয় শ্রমিকদলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপত্বিতে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সহ-শ্রম সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, মামুন মোল্লা, নগর সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী এ কর্মশালা চলে। কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন