বিজ্ঞাপন

‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র দাবি ৫+১

September 22, 2018 | 7:34 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি— এই পাঁচটিই প্রধান জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার।

তবে ‘বৃহত্তর ঐক্য’র নামে বিএনপি এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়ে নতুন আরেক দাবি সামনে এনেছে— খালেদা জিয়ার মুক্তি।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য প্রক্রিয়া, ডা. অধ্যাপক একি উ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট এবং বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘বৃহত্তর ঐক্য এক হিসেবে হয়েই গেছে। আজকে যারা জাতীয় ঐক্য’র উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের প্রধানতম দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনঃর্গঠন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন। এগুলো আমাদেরও দাবি। তবে আমরা যারা বিএনপি করি, তাদের অন্যতম প্রধান দাবি হলো বিএনপির চেয়ারপরসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। সেই সাথে সকল রাজবন্দির মুক্তি।’

তিনি বলেন, ‘আজকের এই নাগরিক সমাবেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা মাইল ফলক। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং একটা সুষ্ঠূ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, আজকের এই নাগরিক সমাবেশ তাতে নতুন মাত্রা যোগ করল।

ব্যারিস্টার মওদুদ আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই এক সঙ্গে কাজ করুন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। একটা বৃহত্তর ঐক্যর মাধ্যমে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার রক্ষার স্বপ্ন আমরা বাস্তাবয়ন করব।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দেখেছি যারা আজ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের প্রধান শর্ত এই যে, নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকরতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং ইভিএম পদ্ধিত কোনো মতেই ব্যবহার করা যাবে না। আমাদেরও এই একই দাবি।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা ন্যুনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবিগুলো আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করি। যে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এবং একই সঙ্গে সমস্ত রাজবন্দিকে মুক্ত দিতে বাধ্য করব। এবং একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করব।

‘আজকে এই সভার মধ্য দিয়ে আমরা এক ধাপ এগিয়ে গেছি। আমরা আশা করব তাদের (ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী) নেতৃত্বে অতি দ্রুত জাতীয় ঐক্য অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের বুকের ওপর যে দানব সরকার বসে আছে, তাদেরকে সরাতে হলে জনগণের ঐক্যর কোনো বিকল্প নাই। দেশে এখন যে দুঃশাসন চলেছে, এই দুঃশাসন আমাদের স্বাধীনতার সব স্বপ্নকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো ধূলিসাৎ করে দিয়েছে, বলেন মির্জা ফখরুল।

কারাগারে খালেদা জিয়ার দুরবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীকে একটা স্যাঁতসেঁতে নির্জন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি কারাগার থেকে আমাদেরকে খবর পাঠিয়েছেন- যে কোনো মূল্যে জাতীয় ঐক্য করে এই দুঃশাসনকে সরাতে হবে। তার কী হবে, তা নিয়ে তিনি ভাবেন না।

বিজ্ঞাপন

ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আমাদের হাজার হাজার প্রাণ গেছে, ৫ শ’ নেতকর্মী গুম হয়েছে, নুতন করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- আন্দোলন থেকে বিরত রাখা এবং আগামী নির্বাচনে জনগণ যেন অংশি নিতে না পারে।

তিনি বলেন, এই সরকারকে যদি আমরা সরিয়ে দিতে না পারি, জনগণের সরকার যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, জাতীয় ঐক্যর সরকার যদি প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা থাকবে না, জনগণের অধিকার থাকবে না।

এর আগে বিকেল ৩ টায় নাগরিক সমাবেশ শুরুর সময় ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল, আ স ম আব্দুর রব, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সুলতান মোহম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, নূর হোসেন কাসেমী, আব্দুর রব ইউসুফি, ড. মঈন খান এক মঞ্চে হাতে হাত রেখে জাতীয় ঐক্য’র সূচনা করেন।

এদিকে সমাবেশে যোগ দেওয়া কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমর্থকের বেশির ভাগই ছিল বিএনপির। দর্শক সারিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ২০ দলীয় জোটের নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ ড. কামাল হোসেনের নাগরিক সমাবেশে যায়নি।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এ সমাবেশ জুড়েই ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শ্লোগান। নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বক্তব্য দিতে উঠলে বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা খালেদার মুক্তি চেয়ে মুহুর্মুহু শ্লোগান দিতে থাকলে এ সময় তিনি বলেন, ‘আমিও খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আপনারা শান্ত হোন।’

সমাবেশে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণ সংহতির আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ’র মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডা. কামাল হোসেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

তবে সমাবেশ শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা পরে সেখানে উপস্থিত হন বি. চৌধুরী।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মাঝে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় সমাবেশ কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

আরও পড়ুন-

হাতে হাত রেখে ঐক্য ঘোষণা

সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টা পর গেলেন প্রধান অতিথি

‘কবে যে মানচিত্র লুট হয়ে যায়, সেই আতঙ্কে রয়েছি’

খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি চাই: মান্না

নির্বাচনের একমাস আগে সেনা মোতায়েনের দাবি বি. চৌধুরীর

২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত ৬ দল আসেনি নাগরিক সমাবেশে

জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে যোগ দিয়েছে বিএনপি, পুলিশ সতর্ক

সারাবাংলা/এজেড/এমএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন