বিজ্ঞাপন

ঐক্যফ্রন্টের ‘ঐক্য’ আর কত দিন

January 4, 2019 | 9:23 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ভোটের আগে রাজনীতির মাঠ গরম করে তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘ঐক্য’ আর কতদিন অটুট থাকবে—সে বিষয় নিয়ে এরইমধ্যে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বিশেষ করে নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের মহাবিপর্যয়ের পর জোটের স্থায়িত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ জোট নেতাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে সন্দেহ-সংশয়।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, কর্মসূচি ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির নীতি-নির্ধারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিষ্প্রয়োজন মনে করছে বলে জানা গেছে।

তারা বলছেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে পুরোনো মিত্রদের পাশ কাটিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন, তাদেরকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ গুরুত্ব প্রদান, জোট শরিকদের চেয়ে বেশি আসন (ঐক্যফ্রন্ট-১৯, বিএনপি জোটের অন্য শরিক-১৮) ছেড়ে দেওয়াসহ সব ক্ষেত্রেই ড. কামাল হোসেন-জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের বেশিই দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু ফল শূন্য।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোটের পর অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন সভা ও ধানের শীষ প্রার্থীদের অভিমত গ্রহণ সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যর্থতার বিষয়টিই বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ‘টিপ্পনি’ কেটেছেন। ফলে সভায় অংশ নেওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের প্রার্থী ও শীর্ষ নেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।

সভায় অংশ নেওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করেছেন। আমাদের তো মাত্র ৭টি আসন দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দুটি আসনে আমরা জিতেছি। তাদের তো ৪০টি আসন (জামায়াত-২২, অন্যান্য দল-১৮) দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর রেজাল্ট কী?’

এদিকে নির্বাচনের ভরাডুবির পর এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো বৈঠক হয়নি। ভোটগ্রহণ শেষে ৩০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮ টায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানেই সর্বশেষ একসঙ্গে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এরপর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি অথবা লিয়াজোঁ কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বরং এই মুহূর্তে ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা দলগুলো নিজেদের মধ্যে বৈঠক, মূল্যায়ন সভা, আত্ম-বিশ্লেষণে ব্যস্ত রয়েছে। ভোটের পরের দিন বিকেল ৪টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং বিকেল ৬টায় ২০দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়।

নির্বাচনের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) ধানের শীষের প্রার্থীদের ডেকে সভা করে বিএনপি। সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোস্তফা মহসিন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তবে সেটি ছিল ধানের শীষ প্রার্থীদের মূল্যায়ন সভা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সভা নয়— এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আগামীকাল জোটের অন্যতম প্রধান শরিক গণফোরামের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং সিলেট-২ আসন থেকে নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খানের শপথ গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। মহাবিপর্যায়ের মধ্যেও ধানের শীষ এবং উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হওয়া এই ‍দুই প্রার্থীর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য’র ইতি ঘটতে পারে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলের যে দুই জন নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের শপথ গ্রহণের বিষয়ে আগামীকালের (শনিবার) বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো বৈঠক বা কর্মসূচি নেই। তবে যেকোনো মুহূর্তে বৈঠক ডাকা হতে পারে। এই মুহূর্তে বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন এবং পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতরের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভোটের ফল প্রত্যাখান করেছেন। আগামী দিনের কর্মসূচিও ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই পালন করা হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন