বিজ্ঞাপন

নিরাপদ সড়কের জন্য দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ

April 23, 2018 | 8:25 am

।। আবদুল জাব্বার খান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সম্প্রতি রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় এক হাত হারানোর পর হাসপাতালে ধুকে ধুকে মারা যান কলেজছাত্র রাজীব হোসেন। এরপর গোপালগঞ্জে পরিবহন শ্রমিক হৃদয়ের হাত এবং রাজধানীর বনানীতে বিআরটিসির বাসের চাপায় রোজিনা আক্তার নামের এক গৃহকর্মী পা হারান। সর্বশেষ রোববার গাইবান্ধায় বাস ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ৪ জন। এ সবগুলো দুর্ঘটনার জন্যই প্রাথমিকভাবে পরিবহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে দায়ী করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা না গেলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির করা প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে ,২০১৮ সালের জানুয়ারি মার্চ মাস পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৪২৯টি। এতে নিহত হয়েছেন, ১ হাজার ৪৪১ জন আর আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৮০ জন।

বিজ্ঞাপন

 

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে হারে মৃত্যু ঘটছে অনেক যুদ্ধেও এত মানুষের মৃত্যু হয় না। আর এসব মৃত্যুর পেছনে ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক, অতিরিক্ত গতি, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, নিয়ম না মানার প্রবণতাসহ জনসচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন তারা। সেইসঙ্গে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে এসব ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে বলে- অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

বিজ্ঞাপন

 

 

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ঢাকা থেকে জেলা পর্যায়ে সংযোগকৃত মহাসড়কের কার্যকরি ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ, চালকদের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার বিধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, মহাসড়কে রোড ডাইভারশন তৈরী, পথচারী চলাচলে প্রয়োজনীয় স্থানে আন্ডারপাস, স্কুল সিলেবাসে ট্রাফিক রুলস সম্পর্ক তৈরি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা, মোটর আইনে অপরাধীর সাজা, জরিমানা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা গ্রহণে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রিটকারী আইনজীবীসহ ভুক্তভোগীরা।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও এগুলো রোধে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ বিষয়ক সেলে কোনো ভূমিকা নেই।
সড়ক দূর্ঘটনায় ভূক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন না জানায়ভুক্তভোগীরা আদালতে এসে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারছে না বলে হাইকোর্ট তার এক রায়ের পর্যবেক্ষনে বলেছেন।

 

সড়কের নিরাপত্তার নিয়ে আদালতের শরনাপন্ন হওয়া রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক দূর্ঘটনা দিন দিন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করছে। এসব দূর্ঘটনা রোধে উচ্চ আদালতের বেশ কিছু নির্দেশনাও আছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেই নির্দেশনাগুলি বাস্তবায়ন করছে না, যার ফলে দিন দিন দূর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় পক্ষগনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও তিনি জানান।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের চেয়ারম্যান চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সারাবাংলাকে বলেন, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার পেছনে আমরা জনগণই দায়ী। আমরা নিজেরাই সচেতন না। আইন তো পরের কথা।

 

 

 

এক ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ কোটা সংস্কার চেয়ে বা স্কুলের বেতন বাড়ালে সঙ্গে সঙ্গে আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন গড়ে তুলি কিন্তু যে সড়ক দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত আমাদের পঙ্গু করে দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা একত্র হতে পারি না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা রাস্তায় নামতে পারি না।

রাজিবের ঘটনার মত কিছু ঘটনা ঘটলে আমাদের অনুভূতি জাগ্রত হয়। কিছু সময় পর সেটি আর থাকে না। নিরাপদ সড়কের জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ জোর আন্দোলন। এজন্য প্রথমেই আমাদের সাধারণ মানুষকে আইন মানতে হবে। পরে চালকদের আইন মানতে বাধ্য করা হবে, তবেই আমরা নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। তা না হলে সারাজীবন আইন করেও এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না।’

 

 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সড়কে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এ নৈরাজ্য থামাতে প্রয়োজন জন সচেতনতা এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ। সড়ক দূর্ঘটনায় এখন পর‌্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোন সাজা না হওয়ায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে চলছে। এ নৈরাজ্য থামানো না গেলে এটা হবে আমাদের জন্য অশনি সংকেত।
সড়ককে নিরাপদ করতে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা দরকার বলে মনে করেন যাত্রী কল্যাণের এ মহাসচিব।

সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

 

মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার পরিবার, আর শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি, আহত অথবা কোনও সম্পদের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে যে কেউই এই মামলা দায়ের করতে পারবেন।

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে নতুন কোনো শাস্তির বিধান না রেখেই সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ গত বছর মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়।
প্রস্তাবিত আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মোটরযান চালকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি এবং বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর ও পেশাদারের জন্য ২১ বছর রাখা হয়েছে। চালকের সহকারীর যোগ্যতা হবে পঞ্চম শ্রেণি পাস। কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে বা মোবাইল ফোনে কথা বলা অবস্থায় গাড়ি চালানো শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

 

 

প্রস্তাবিত আইনে, গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সবসময় সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ নিয়ম না মানলে দুই বছর কারাদণ্ড ও ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ফিটনেস না থাকা মোটরযান চালালে গাড়ির মালিকের শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা। আইনে দণ্ডবিধির সুনির্দিষ্ট ধারা উল্লেখ না থাকলেও বিধিতে সড়ক সংক্রান্ত দুই ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। দুর্ঘটনায় হত্যা হলে ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি যাবজ্জীবন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা হলে ৩০৪-এর (বি) অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমএস

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন