শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নয় সংঘর্ষ শুরু ২ দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে
১৯ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৫৮
ঢাকা: রাত থেকে শুরু করে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলেছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায়। জানা যাচ্ছিল, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জের ধরে কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের দোকানগুলোর কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জানা যাচ্ছে, সংঘর্ষের সূত্রপাতে মোটেও জড়িত ছিলেন না শিক্ষার্থীরা। বরং চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের দুই ফাস্ট ফুড দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জের ধরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। পরবর্তী সময়ে সেই সংঘর্ষই ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) মধ্যরাতের দিকে নিউমার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে এসে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ঘটনার সময়কার আশপাশের এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি ক্যামেরা) ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলামের বক্তব্যেও উঠে এসেছে একই তথ্য।
মঙ্গলবার রাতে আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি বা কম দামে পণ্য কেনার কোনো বিষয় নয়, বরং নিউমার্কেটে মারামারির শুরুটা হয়েছিল ফাস্ট ফুড আইটেমের দুই দোকানের কর্মচারীর বাকবিতণ্ডা থেকে। আমরা এমন তথ্যই জানতে পেরেছি। তবে ওই দুই দোকানের যেসব কর্মচারী জড়িত ছিল, তাদের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। দুই দোকানের মালিককেও এখনো পাইনি।
আরও পড়ুন-
- নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ
- ঢাকা কলেজের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত: শিক্ষামন্ত্রী
- ‘লাশ হয়ে বের হব, তবুও হল-ক্যাম্পাস ছাড়ব না’
- শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে নিউমার্কেট আবারও রণক্ষেত্র
- মীমাংসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে শিক্ষকরাও
- বিকেলের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের
- নিউমার্কেট এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগ, নিষ্ক্রিয় পুলিশ
গণমাধ্যমে আসা ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বাদানুবাদের সূত্রপাত চন্দ্রিমা মার্কেটের চার নম্বর গেটের দুই ফাস্ট ফুডের দোকান ওয়েলকাম ও ক্যাপিটালের মধ্যে। ওয়েলকামের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাত ১১টার দিকে তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় বাপ্পী ধারালো অস্ত্রধারী ১০-১২ জনকে নিয়ে কাওসারকে হুমকি-ধমকি দিলে কাওসার দোকানের চাপাতি-চাকু নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন।
এরপর বাপ্পী সেখান থেকে পালিয়ে যান। তবে কিছু সময় পরেই তিনি আরও লোকজন নিয়ে এসে কাওসারের ওপর হামলা করেন। জানা গেছে, বাপ্পীর সঙ্গে আসা এই ব্যক্তিরা তার ঢাকা কলেজের ‘বন্ধু-বান্ধব’। এই হামলার সময় রামদা হাতে সাদা টি-শার্ট পরা এক তরুণের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল মার্কেটে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এর পরপরই পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
দুই দোকানের কর্মচারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হলেও বাপ্পী ঢাকা কলেজের ‘বন্ধু’দের নিয়ে এসে হামলার পরপরই চাউর হয়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেছেন। এরপরই ব্যবসায়ীসহ দোকানের কর্মচারীরাও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে গিয়ে তাদের ওপর ব্যবসায়ীরা হামলা করেছে জানালে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে।
এসময় রাতেই দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। মঙ্গলবার দিনভরই গোটা এলাকা ছিল রণক্ষেত্র। সংঘর্ষে আহত হয়ে কমপক্ষে ৪০ জনের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী এক তরুণ ঢামেক হাসপাতালে মারাও গেছেন চিকিৎসাধীন অবস্থায়। বাকিদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দিনভর ব্যবসায়ীদের হামলায় অন্তত আট জন সংবাদকর্মীর আহত হওয়ার তথ্য মিলেছে।
এদিকে, শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ীদের এই সংঘর্ষে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার মধ্যরাত পেরিয়ে সংঘর্ষ যখন উত্তাল, তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিনিক্ষেপ করে। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা অবস্থান নিতে শুরু করলেও পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। দুপুর নাগাদ পুলিশ এলেও তাদের নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। পরে পুলিশ ‘অ্যাকশন’ শুরু করলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সোমবার রাত থেকেই পুলিশ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরই আক্রমণ করেছে পুরোটা সময়। এ অভিযোগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এলাকার দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুনের প্রত্যাহারও দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন-
- শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- সংঘর্ষের জন্য সামাজিক মাধ্যম দায়ী: শিক্ষামন্ত্রী
- ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ঢাবি ছাত্রলীগের অবস্থান
- নীলক্ষেতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন-বিক্ষোভ, বন্ধ নিউমার্কেট
- ঢাকা কলেজকে সংহতি, নীলক্ষেত অবরোধ করেছেন ইডেন শিক্ষার্থীরা
- ঢাকা কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষকদের উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর