বিজ্ঞাপন

৭৫এর ১৫ আগস্ট ঢাবি সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর

August 15, 2018 | 2:29 pm

।। কবিরুল ইসলাম ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে হারান ছাত্রত্ব। তবে মুচলেকা দিয়ে তা ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও  রাজী হননি তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ সারাবাংলাকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার  ২৮ বছর পর ফের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর। তার আগের দিন ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিলো।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ১৯৪৯ সালে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা নানান দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। তারা ধর্মঘট করলে বঙ্গবন্ধু তাতে সমর্থন দেন ছাত্র হিসেবে। কিন্তু সমর্থন দেওয়াতে তাঁকেসহ অনেককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। সকলেই জরিমানা দিয়ে ছাত্রত্ব গ্রহণ করে কিন্তু বঙ্গবন্ধু ন্যায্য আন্দোলন জরিমানা দিয়ে ছাত্রত্ব গ্রহণ করেননি।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সবচেয়ে নির্মম ও সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আসার কথা ছিল। কিন্তু ভোরবেলা সামরিক বাহিনীর একাংশের চক্রান্তের ফলে  সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা আর সম্ভব হয়নি। কাজেই এই অধ্যায় বেদনাদায়ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে পাওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ১ ডিসেম্বর কলকাতার একটি কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন ২৭ বছরের যুবক শেখ মুজিবুর রহমান। ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সেশন ছিল ১৯৪৭-৪৮, এ সময় তার রোল নম্বর ছিল ১৬৬ আর আবাসিক হল সংযুক্ত ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল। কিন্তু তিনি হলে থাকতেন না।

বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে গবেষণারত স্বপন কুমার দাস দাবি করেন ‘বঙ্গবন্ধু হলের ১৫২ নম্বর কক্ষে ছিলেন। এই হলকে ঘিরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালন করতেন। ১৯৪৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে ছাত্রত্ব হারান।

বিজ্ঞাপন

এর পর তিনি আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ফিরতে না পারলেও ২০১০ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনকের সেই হারানো ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিয়ে ছাত্রত্ব কেড়ে নেওয়ার কলঙ্কের দায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করেন।

এ সব বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে সারাবাংলার কাছে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। এই সংহতি প্রকাশ করাটাই তখনকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ‘অপরাধ’ ছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ১৯৪৯ সালের ২৬ এ মার্চ বঙ্গবন্ধুসহ কয়েকজন ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল করে। একই সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেয় এই ছাত্রত্ব তারা ফিরে পেতে পারে যদি তারা ১৫ টাকা জরিমানা দেয় ও অভিাবককরা মুচলেকা জমা দেয়। এই আদেশ জারির পর বহিষ্কৃত অন্যান্য ছাত্ররা ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেননি। নিরবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গেলেন।

ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক সবসময় চলবে। ১৯৪৯ সালের সেই অন্যায় সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে রহিত করে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেন। আমরা সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিই এই আদেশ রাখা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। এ আদেশ আমরা প্রত্যাহার করেছি। এই সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর কোনো যায় আসে না। এটি দরকার ছিল আমাদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সত্য প্রকাশের জায়গা। আমরা ১৯৪৯ সালের অন্যায় সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছি।

বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নিজ বিভাগের (আইন) ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিভাগে পড়তে পেরে আমি গর্বিত। তিনি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/কেকে/জেডএফ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন