বিজ্ঞাপন

সংবিধান না মেনে দেশ চালাচ্ছে সরকার: ড. কামাল

September 11, 2018 | 1:01 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধান অমান্য করে দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কারা করছে তা তদন্ত করে দেখা দরকার। গুম-নিখোঁজ শেষে যারা ফিরে আসছে তারাও মুখ খুলছে না। কেন খুলছে না? এভাবে গুম-নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সংবিধান সমর্থন করে না। এগুলোর বিষয়ে আদালতে তদন্ত হওয়া দরকার।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) গণফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সরকার সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে না। সংবিধানে বলা আছে, কাউকে আটক করা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে সোর্পদ করতে হবে। সংবিধানের এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। আমরা এ সব বিষয়ে আদালতে যাব। উচ্চ আদালতের কাছে আমরা আদেশ চাইব।’

সংবিধান প্রণেতা আরও বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে পুলিশ ককটেল ছুড়তে দেখেছে, আসামিকে বাদী চেনেন না। কিন্তু মামলা হচ্ছে এগুলো আজব দেশেই ঘটতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটেনি মামলা করে রেখেছে পুলিশ। সারাদেশে হঠাৎ ধরপাকড়, পুরনো মামলায় আটক, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের এই ধরনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবিধানিক শাসন হলো পুলিশ আইন মেনে কাজ করবে। আর অসাংবিধানিক ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসন হলো ইচ্ছামত মানুষকে ধরা যায়, গুম করা যায়, সব কিছু করা যায়। কিন্তু সংবিধানিক শাসনে তা করা যায় না। রাষ্ট্রের নাগরিকরা গুম হয়ে যায়, তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। এগুলো আপত্তিকর।’

বিজ্ঞাপন

‘পুলিশ যদি সরকারের অনুমতি ছাড়া এগুলো করে তাহলে সেটা গুরুতর অপরাধ। আর যদি সরকারের অনুমতি নিয়ে করে তাহলে সরকার সংবিধান অমান্য করছে।’

‘সাদা পোশাকে ধর-পাকড় চলছে। সাদা পোশাকে যারা আটক করছে তারা কারা? সাদা পোশাকধারীদের ছিনতাইকারী ভেবে জনগণ যদি ব্যবস্থা নেয় তখন কী হবে? সংবিধানে রয়েছে কাউকে আটক করতে হলে ইউনিফর্ম পরে আটক করতে হবে। আমরা এ সব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা সংবিধানের শাসনের বাইরে চলে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সাদা পোশাক পরে কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে ধরে নিয়ে যাবে, এ রকম কোনো বিধান নেই। প্রথমে তারা অস্বীকার করেন, পরে দুই চার পাঁচ দিন পরে স্বীকার করে আমারা তাদের ধরেছি, ওদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রীতিমত এই ধরনের মিথ্যা কথা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বলবে এটা আইনে বাধা রয়েছে। তারা সরাসরি বলবে আমরা পুলিশ থেকে ডিবি থেকে সিআইডি থেকে এসেছি। এই হলো আমাদের ওয়ারেন্ট, এই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ধরেছি। তাদের নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। এক ধরনের লুকোচুরি করা হচ্ছে। কিন্তু একবার দুইবার বিশেষ কারণে এটা হলে হতেও পারে। কিন্তু তা নিয়মিতভাবে করা মানে হচ্ছে আইনকে নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এটা একটা মহাসংকট। সরকার সংবিধান না মেনে বেআইনিভাবে দেশ শাসন করছে। এটা একটা সাংবিধানিক সংকট।’

ড. কামাল বলেন, ‘১২ ছাত্রকে তারা ধরে নিয়ে গেল কী জন্য নিয়ে গেল আমরা জানি না। প্রথমে তারা অস্বীকার করলো। পরে স্বীকার করল ৫ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে। অথচ রিমান্ডে নিতে হলে কী কারণে আটক করা হয়েছিল ধরার সঙ্গে সঙ্গে জানানোর কথা। যাতে তাদের পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এগুলো করা হচ্ছে সংবিধান অমান্য করে এবং নিয়মিতভাবেই তা করা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত। সরকার সংবিধান শাসন চালু করলে এগুলো চলতে পারত না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা দেশে লালন করতে হয়, একটু সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়, যাতে সবাই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশটা তার উল্টো হচ্ছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নির্বাচন যদি হয়, আমরা চাই নির্বাচন হোক। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার মত কোনো পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে না। সাদা পোশাক পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, ধরপাকড় করছে, এটা নির্বাচনী পরিবেশ না।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে কেন ছাত্রদের আটক করা হচ্ছে? তারা শান্তিপূর্ণভাবে কিছু দাবি করেছিল, সরকারকে সরানোর জন্য নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা কিছু দাবি করেছিল।’

‘ছাত্ররা কোটা সংস্কার চেয়েছে তারা বাতিল চায়নি। যেভাবে কোটা করা হচ্ছে এখন শতকরা ৫২ জন কোটার মধ্যে ছিল। যোগ্যতা না ধরে কোটার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংবিধানের মূলনীতি অনুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি করা উচিত। ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা আছে। ৪৬ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার কথা বলা হয়েছিল সেটা বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। এত বছর পর কোটার দরকার আছে কি না সেটা ভাবতে হবে। সংবিধানে বলা আছে যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাইকে মূল্যায়ন করতে হবে। সংবিধানে সকলের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘৪৬ বছর আগে আমরা যে মন মানসিকতা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটা করেছিলাম। সেটা তখন যুক্তিসঙ্গত ছিল এবং আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে করেছিলাম। ৪৬ বছর পর প্রশ্ন থাকে যে মুক্তিযোদ্ধার কোটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, আর হলেও কতখানি দেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত হলো অনান্য কোটা কেন হবে, এবং কেন যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে না। কারণ সংবিধানে লেখা আছে সকল নাগরিকের সমান অধিকার। একটি রাষ্ট্রে পাঁচ রকমের নাগরিক তো হবে না। সাধারণ নাগরিক, অসাধারণ নাগরিক বলে কিছু থাকা যায় কি না?’

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রেস ক্লাবে বিএনপির মানববন্ধন শেষে নেতাকর্মীদের আটকের বিষয়ে ড. কামাল বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের নমুনা না। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বড় আকারে ধরপাকড় হচ্ছে। আমরা যেহেতু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, সংবিধানকে বিশ্বাস করি। ফলে এ ধরনের ধরপাকড়কে সমর্থন করি না।’

কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কর্নেল তাহেরের বিচারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিচার মেলানো হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে কর্নেল তাহেরের বিচার হয়েছিল সামরিক আদালতে। এভাবে কারাগারে খালেদা জিয়ার বিচার সংবিধান সম্মত না, এটা আমরা উচ্চ আদালতে বলব।’

তিনি বলেন, ‘৪১ বছর আগের একটা উদাহরণ দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থা করে বিচার করা, আমি মনে করি সংবিধানকে অমান্য করা। সরকার যেটা করছে এটা সরকারের পক্ষে যাচ্ছে না। তিনি অপরাধী হলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হতে পারে।’

‘খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে উচ্চ চিকিৎসা দিতে হবে। দেশে যে অবস্থা চলছে তা সভ্য দেশে চলতে পারে না। এখানে অসভ্য কোনোকিছু করা হলে তা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরবারকে ভুলে যাওয়া উচিত না আমরা সভ্য, সভ্য রাষ্ট্রকেই যেন আমরা অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত না করি। একটা মানুষ অসুস্থ হয়েছে, তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসভ্য কিছু করা উচিত না। যাতে খারাপ উদাহরণ না হয়। আজকে যারা বিরোধী দলে আছে তারা হয়ত কাল বিরোধী দলে না থাকতেও পারে। ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত না।’

২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্টের সমাবেশের বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি পাইনি। অনুমতি না পাওয়ায় মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করব। আওয়ামী লীগ তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে। তারা করতে পারলে অন্যরা করতে পারবে না কেন? আওয়ামী লীগকে এই জমিদারি ভাব পরিহার করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ দশ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘তারা নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের জন্য এসেছিল। পাঁচ বছর পর এক ‘অনুষ্ঠানের’ মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় এসে টিকে আছে।’

২০ দলীয় জোটে জামায়াত আছে, এই জোটে আপনারা থাকবেন কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত এখন নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল না। আমরা জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে জোটবদ্ধ হবো না। আমাদের এ অবস্থানের বিষয়টি আমরা পরবর্তীতে আরও স্পষ্ট করব।’

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন