বিজ্ঞাপন

ফেনী-১ ও ৩ আসন: শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী, শঙ্কা বিএনপির

December 19, 2018 | 4:38 am

।। মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ফেনী: ফেনী ১ ও ৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থীর সঙ্গে লড়ছে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী। ফেনী-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আব্দুল্লাহ, ফেনী-৩ আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই জনের প্রতীক আপেল।

ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। এই আসনে জাসদের উল্লেখযোগ্য ভোটার ও জনসমর্থন নেই। আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা দুই ভাগে নির্বাচন করছেন।

ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম নির্বাচনী প্রচারণা করছেন শিরীন আখতারের পক্ষে। একই উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন মজুমদার বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। এই আসনে সরকার দলের নেতারা এখন আছেন দোটানায়।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন মজুমদার, সদস্য ভিপি নুরুল আমীন, আমজাদ হাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর হোসেন মীরু, মুন্সির হাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবুল হক, ফুলগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সালেহ আহম্মদ মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক একরাম পাটোয়ারিসহ শতাধিক নেতা নৌকার প্রতীকের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আব্দুল্লাহর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করছেন।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  সামছুদ্দিন বুলু মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়াদার চৌধুরী সোহেল, ছাগলনাইয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা, ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুল হক ভূঞা রাশেদ, শামীম মজুমদার জাসদের নেত্রী শিরীন আখতারের সঙ্গে কাজ করছেন।

ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন মজুমদার বলেন, ‘জাসদের নেত্রী শিরীন আখতার এর আগেও এই আসন থেকে নির্বাচন করেছে কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কাজে আসেননি। সে জন্য আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।’

বিজ্ঞাপন

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন জানান, অতীতের সকল রাগ-ক্ষোভ ভুলে গিয়ে নৌকা মার্কাকে জেতাতে হবে। কারণ নৌকা জিতলে জিতবে আওয়ামী লীগ। প্রার্থী দেখে নয়, নৌকা দেখে ভোট দিতে হবে।

এ ব্যাপারে শিরীন আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নৌকার কাছে অন্য সব ভেসে যাবে। যারা নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মামলার সাজার কারণে তিনি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখানে নির্বাচন করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু। মহাজোট প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পুরোদমে মাঠে প্রচারণা চালালেও বিএনপির প্রার্থীকে দেখা যায়নি।

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঞা) আসনে এখনো তৈরী হয়নি নির্বাচনী আমেজ, চলছে চাপা আতঙ্ক। বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একক প্রার্থী দিতে পারলেও মহাজোট বিপাকে আছে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি প্রার্থী দাগনভূঞা পৌরসভার সাবেক মেয়র আকবর হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নীরবে মাঠে তৎপরতা চালালেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। কারণ এরইমধ্যে সরকারদলীয় কর্মীদের হাতে বিএনপির প্রচার মাইক ভাঙচুর ও কর্মী পেটানোর ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আছে কর্মীদের পুলিশি হয়রানির।

এদিকে লাঙল প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। মাঠে তার ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গত নবম জাতীয় সংসদের নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী-যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার। আপেল প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে শক্তভাবে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। আছেন মোটর গাড়ি প্রতীক নিয়ে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের লাঙল প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য পদত্যাগকারী নেতা রিন্টু আনোয়ারও।

ফেনী-৩ আসন দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত। সোনাগাজীর ৯ ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং দাগনভূঞা উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ফেনী-৩ আসন গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার ২১৫।

৯০-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রথমে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাহবুবুল আলম তারা মিয়া নির্বাচিত হন এ আসনে। পরে ’৯৬ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত সব কয়টি জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রয়াত নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোশারফ হোসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে মহাজোট প্রার্থী রিন্টু আনোয়ার পরাস্ত হন বিদ্রোহী রহিম উল্লাহর কাছে। পরাজিত প্রার্থীর অভিযোগ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর অসহযোগিতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষাবলম্বনের। এবারও বিদোহী প্রার্থী থাকায় জনমনে প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো মহাজোট প্রার্থীর সঙ্গে থাকবে তো?

বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেন বলেন, ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকানো যাবে না। তিনি অভিযোগ করেন পুলিশি হয়রানির।

মহাজোটের প্রার্থী মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, আশা করি শেষ পর্যন্ত মাঠে কোনো বিদ্রোহী থাকবে না। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একই ছাতার নিচে এসে মহাজোটের পক্ষে কাজ করবে। বিজয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার জানান, তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। জন রায়ে নির্বাচিতও হবেন বিপুল ভোটের ব্যাবধানে এমনই প্রত্যয় তার মুখে।

অপরদিকে মহাজোটের গতবারের প্রার্থী রিন্টু আনোয়ার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, সুহৃদের দেওয়া কথা রাখতেই প্রার্থী হয়েছি। ১০ ভোট পেলেও কোনো আফসোস নেই। তবে প্রশাসনের তাছে তার দাবি, সেই ১০ জন ভোটারও যাতে সুষ্ঠুভাবে কেন্দ্রে আসতে পারে এবং নিরাপদে ফিরে যেতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও ফেনী-৩ আসনে বিএনপি সংকট এখনও কাটেনি। ফেনীর সোনাগাজীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নির্বাচনী সভা করতে পারেনি ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের বিএনপি প্রার্থী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই আকবর হোসেন। গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে সোনাগাজীর স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী সভার আয়োজন করে উপজেলা বিএনপি। খবর পেয়ে সেখানে  যায় পৌর যুবদলের যগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে যুবদল কর্মীরা।

পরে সভায় দাওয়াত নিয়ে উপজেলা বিএনপি সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসোনের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। এর একপর্যায়ে সভা না করেই ফিরে যায় বিএনপির প্রার্থী আকবর হোসেন।

সোনাগাজী পৌর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ যুবদলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে মূল্যায়ন না করেই সভার আয়োজন করায় তারা নির্বাচনী সভা করতে দেয়নি।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অনেক নেতা কর্মীকে সভার কথা জানিয়েছি, বিএনপি একটি বড় দল এখানে জনে জনে দাওয়াত দেয়ার সুযোগ নেই।’

সারাবাংলা/একে/পিএ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন