বিজ্ঞাপন

ফেনীতে আ. লীগের জমজমাট প্রচারণা, নীরব বিএনপি

December 22, 2018 | 10:40 am

।। মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ফেনী: ফেনীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পোস্টার, ব্যানার, নির্বাচনি জনসভাসহ সবধরণের প্রচারণায় অংশ নিলেও সেখানে বিএনপি’র তেমন কোনো কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। জেলার তিনটি আসনের কোনোটিতে বিএনপি’র পোস্টার, ব্যানার। জেলার সবকটি আসনে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া বলেও অভিযোগ আছে। যদিও, বিএনপির এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফেনী-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী জয়নাল আবদীন ভিপির বাড়ি সুনসান নীরব। প্রার্থী ও তার ছেলে ছাড়া পুরো বাড়ি পুরুষ শুন্য। কোনো নেতাকর্মীর দেখা নেই। আবার বাড়ির মূল ফটকে লাগানো হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার। এ বিষয়ে তিনি জানান, আমার এলাকার ফলেশ্বরের মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেনা। আমার নেতাকর্মীদের বের হতে দিচ্ছেনা। যারা আমার সাথে দেখা করতে আসে তাদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে এখানে কিছুই নেই।

জেলা বিএনপি’র সভাপতি এ্যাডভোকেট আবু তাহের জানান, নির্বাচনের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা। সে প্রচারণা চালাতে পারছেনা বিএনপি প্রার্থীরা। ফেনীর তিনটি আসনের কোথাও পোস্টার, ব্যানার নেই। এমনকি করতে পারেনি নির্বাচনি কোনো জনসভা। অভিযোগ আছে, গত ১৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামতে চাইলে ফেনী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেনের ওপর হামলা করে সরকার দলীয় ক্যাডাররা। ফেনী-১ আসনে প্রতিদিন প্রচারণার গাড়িতে হামলা হচ্ছে। ফেনী-২ আসনের বিএনপি প্রার্থীর বাড়ির দরজায় লাগানো হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোস্টার। অথচ বিএনপি রাস্তায়ও পোস্টার লাগাতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

ফেনী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেন জানান, ২০ ডিসেম্বর ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় আমার প্রচারণার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে মহাজোট প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় সিএনজি অটোরিক্সা চালক মুন্সি ও তার সহযোগী সবুজ, মাইকম্যান মাহফুজ আলম, ইসমাল হোসেনকে পিটিয়ে জখম করে। এ ব্যাপার দাগনভূঁইয়া জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. রবিউল হক জানান, মহাজোটের কোনো সমর্থক বিএনপির প্রচার গাড়িতে হামলা করেনি। এটি ভিত্তিহীন অভিযোগ।

ফেনী-১ খালেদা জিয়ার আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু নির্বাচন করছেন। তিনিও জানিয়েছেন, তার আসনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েনি। চলছে ধরপাকড়। মহাজোট প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন বিএনপির প্রচার গাড়ি ও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাংচুর করছে। ২১ ডিসেম্বর ফেনীর ফুলগাজীর মুন্সিরহাটে নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করেছে সরকার দলীয় ক্যাডাররা। ছাগলনাইয়াও দুটি প্রচার গাড়িতে ভাঙচুর করেছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ফেনীর তিনটি আসনে মহাজোট প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সব ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের নির্বাচনী কার্যালয় বাসা-বাড়ি সব কিছুতেই সরগরম। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে চালাচ্ছেন নির্বাচনি জনসভাও। এদিকে, নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইলেন শোবিজের তারকারাও। ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফেনী-২ আসনের নৌকার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীর সমর্থনে শহরের বিরিঞ্চিতে উপস্থিত হয়ে ভোট চান তারা।

এ সময় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাট্য ব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী, অরুণা বিশ্বাস, শাকিল খান, জ্যোতিকা জ্যোতি, ঈষিকা আজিজ, কাজী আসিফ রহমান, প্রণিল জামশেদ, সাইমন সাদিক ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাসেল উপস্থিত ছিলেন।

তবে, বিএনপির পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি জানান, বিএনপি নালিশ পার্টি। তাদের কাজ হচ্ছে অভিযোগ করা। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা প্রচার করতে পারছেনা। ছাত্রলীগ-যুবলীগ তার বাড়ির পাশেও যায়নি।

জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ফেনীতে সুন্দর নির্বাচনি পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা যখনই অভিযোগ পাচ্ছি সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে, পোস্টার-ব্যানার লাগাতে দিচ্ছেনা-এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, পুলিশী অভিযানের মুখে গ্রেফতার আতঙ্কে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশী অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেকে পালিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেনা বলে দাবি করেছেন বিএনপি প্রার্থী মো. আকবর হোসেন।

দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশী করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টু সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দিনে ও রাতে একেক নেতার বাড়িতে ৮/১০ বার করে হানা দিচ্ছে পুলি

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত কয়েক দিন যাবত তার বাড়িতে পুলিশ প্রতিদিন ৮-১০ বার করে হানা দিচ্ছে। নিয়মিত বাড়ি গিয়ে খাবারও খেতে পারছেন না, ঘুমাতেও পারছেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে গ্রেফতারের নামে হয়রানি করছে। তিনি আরো বলেন, শুধু তিনি নয়, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টুকে বিনা মামলায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া যুবদল কর্মী মো. সেলিম, জামায়াত নেতা মোতাহের হোসেন, যুবদল কর্মী নজরুল ইসলাম শরীফসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।

সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হচ্ছেনা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশীর অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা।

সারাবাংলা/জেএএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন