বিজ্ঞাপন

সেনা মোতায়েন, তবু মাঠে নেই ঢাকা বিএনপি!

December 24, 2018 | 11:44 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে সেদিন থেকেই মাঠে নামবে বিএনপি— এমনটিই শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, সেনা মোতায়েনের পর বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবে দলটি। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও ঘরোয়া আলোচনাতেও বিএনপির নেতারা বারবার বলছিলেন, ২৪ ডিসেম্বর থেকে তাদেরকে আর কেউ বেঁধে রাখতে পারবে না।

কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বিএনপির বক্তব্য কেবল বক্তব্যই রয়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, সেনা মোতায়েন হলেও বিগত ১৫ দিনের মতো সোমবারও (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকার আসনগুলোতে গণসংযোগ বা প্রচার-প্রাচারণায় নামেননি ধানের শীষের প্রার্থীরা।

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে মহানগরে পড়েছে ১৫টি। ঢাকা-৪ থেকে ১৮— এই ১৫টি আসন ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এই ১৫টি আসনের মধ্যে জোট শরিকদের জন্য পাঁচটি আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। বাকি ১০টি আসনে রয়েছে তাদের দলীয় প্রার্থী।

বিজ্ঞাপন

গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর সারাদেশ একযোগে প্রচার-প্রচারণা শুরু হলেও ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে ধানের শীষে প্রচার-প্রচারণা দেখা যায়নি তেমনভাবে। ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও ঢাকা-৭ আসনে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ এবং ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন সীমিত পরিসরে প্রচার-প্রচারণা চালালেও ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া বিএনপি নেতারা শুরু থেকেই নীরব।

এ বিষয়টি যখনই সামনে আনা হয়েছে, তখনই বিএনপি নেতারা বলার চেষ্টা করেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামতে পারছে না। ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নামানোর পর বিএনপি প্রার্থীরাও মাঠে নামবে।

কিন্তু ২৪ ডিসেম্বরও (সোমবার) বিএনপি প্রার্থীদের সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি। কেবল ঢাকা-৪ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী নবিউল্লাহ নবী নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় সীমিত পরিসরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বিকেল সাড়ে ৩টায় শ্যামপুর নিজ বাসা থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে নির্বাচনি প্রচারণা চালান ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী। সারাবাংলাকে নবী জানান, মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ডেমরা এলাকায় প্রচারণা চালাবেন তিনি।

ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত নয়াবাজার এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, কোনো বাধা ছাড়াই প্রায় তিন হাজার লোক নিয়ে নয়াবাজারে ‘বিশাল’ শোডাউন করেছি।

ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর প্রচারণার কোনো খবার পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।

অন্য দিনগুলোতে ঢাকা-৮ ও ৯ নম্বর আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস সীমিত পরিসরে প্রচার-প্রচারণা চালালেও ২৪ ডিসেম্বর তারা প্রচারণায় নামেননি। মির্জা আব্বাসের প্রেসউইং কর্মকর্তা নাহিদ নজরুল সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা-১০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ২৪ ডিসেম্বর প্রচারণার চেষ্টা করেন নিজ নির্বাচনি এলাকা ধানমন্ডিতে। কিন্তু সেখানে নৌকার মিছিলের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সে মিছিলও সম্পূর্ণ করতে পারেননি আবদুল মান্নান। সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে তিনি জানান, তার কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাকেও বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

অবশ্য এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ধানমন্ডি জোনের উপকমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাউকে কোথাও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে— এমন খবর আমাদের কাছে নেই। ধানমন্ডি এলাকা থেকে কাউকে গ্রেফতার বা আটকও করা হয়নি।’

ঢাকা-১১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম কয়েকজন অনুসারী নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাড্ডা হোসেন মার্কেটে প্রচারণা চালান। নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় আধা ঘণ্টার ওই প্রচারণা পর আর তিনি মাঠে নামেননি। সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে তিনি জানান, মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় সাতারকুল এলাকায় প্রচারণা চালাবেন।

ঢাকা-১২ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব প্রতীক বরাদ্দের পরই রয়েছেন আত্মগোপনে। তার পক্ষে কেউ প্রচার-প্রচারণায় নেই। ২৪ ডিসেম্বরও নীরবেই ছিলেন সাইফুল আলম নিরব। তার ফোনও বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ঢাকা-১৪ আসনে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু, ঢাকা-১৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ‘ডেটলাইন’ ২৪ ডিসেম্বরও ছিলেন একেবারেই নীরব।

ঢাকা-১৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই রয়েছেন আত্মগোপনে। ২৪ ডিসেম্বরেও মাঠে নামেননি বিএনপির এই প্রার্থী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনোনয়ন ফরম কেনার সময় বিএনপির যে নেতাকর্মী সমর্থকদের দেখা গেছে, তারা ছিলেন তৃণমূল থেকে আসা। আন্দোলনের সময় নিষ্ক্রিয় ঢাকা বিএনপি নির্বাচনের সময়ও নিষ্ক্রিয়ই রয়ে গেছে। কোনো ‘ডেটলাইনে’ই ঢাকা বিএনপি সক্রিয় হবে না।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন