বিজ্ঞাপন

পূর্ণিমা রাণী ধর্ষণ মামলা : এখনও ধরা পড়েনি ৫ আসামি

January 5, 2019 | 2:57 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জ : ১৭ বছরেও সাজা নিশ্চিত করা যায়নি সিরাজগঞ্জের আলোচিত পূর্ণিমা রাণী ধর্ষণ মামলার সব আসামির। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় পূর্ণিমার বাবার করা মামলার ১১ আসামির মধ্যে ছয়জন কারাবন্দি। তবে বাকি পাঁচজনকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

শুরুতে ধর্ষণের শিকার কিশোরী পূর্ণিমার নাম প্রকাশ হয়নি। তবে ঘটনাটি এতোই হৃদয় বিদারক ছিল যে এক পর্যায়ে তা প্রকাশ হয়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে সেই কিশোরী এখন পূর্ণ নারী। গত বছরের জানুয়ারিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তাকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন।

বিএনপির শাসনামলে এই ভয়াবহ ঘটনার বিচার হয়নি। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে জড়িয়ে আদালতে দেওয়া হয়েছিল অভিযোগপত্র। কিন্তু এতে নারাজি দেন পূর্ণিমার বাবা। সেনাসমর্থিত তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্তের পর শুরু হয় বিচার। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর এগিয়ে যায় বিচারপ্রক্রিয়া। ২০১১ সালে রায় ঘোষিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সুবর্ণচরের সেই নারীকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে

২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের এক সপ্তাহ পর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পূর্ব দেলুয়া গ্রামের সংখ্যালঘুম হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারটির ওপর হামলা করে বিএনপির কর্মীরা। সে সময় পূর্ণিমা ছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রি। গণমাধ্যমে সে সময় খবরটি আসতে দু-এক দিন সময় লাগে। সেসময় পূর্ণিমার স্বজনদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়। ১০ অক্টোবর মেয়েটির বাবা উল্লাপাড়া থানায় মামলা করেন। আসামি করা হয় ১৭ জনকে। মামলার সব আসামিই বিএনপির নেতাকর্মী। কিন্তু পুলিশ মামলাটি এগিয়ে নেয়নি, কাউকে গ্রেফতারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তখন। পরে ২৪ অক্টোবর পূর্ণিমা সিরাজগঞ্জের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে। আদালতের আদেশে পুলিশ মেয়েটিকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করায়। প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

এরপর উল্লাপাড়া থানার পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে ২০০২ সালের ৯ এপ্রিল আদালতে ১৭ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলার বর্ধিত তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। সিআইডির তৎকালীন ইন্সপেক্টর শেখ শহীদুল্লাহ সম্পূরক অভিযোগপত্রে মূল আসামিদের রেখে মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ মির্জা, আব্দুর রহমান, তৎকালীন পৌর মেয়র মারুফ বিন হাবীবসহ ছয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে মেয়েটির বাবা এই সম্পূরক অভিযোগপত্রে নারাজি দেন। কিন্তু এরপরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই মামলা আর এগোয়নি।

বিজ্ঞাপন

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটির সম্পূরক অভিযোগপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু তত দিনে প্রধান আসামিরা জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের দুই বছরেও মামলাটির বিচারকাজ শেষ করা যায়নি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের মার্চে সিরাজগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের বিচার শুরু হয়। সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে অব্যাহতি দেয় আদালত। ২০১০ সালের ১৬ মার্চ মেয়েটি আদালতে এসে বিচারক ওসমান হায়দারের কাছে জবানবন্দি দেন। তিনি এজাহারভুক্ত আসামিদের নাম উল্লেখ করে কীভাবে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ এবং নির্যাতন করা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এক বছর দুই মাস শুনানি চলার পর মামলাটিতে রায় ঘোষণা হয় ২০১১ সালের ৪ মে। এ সময় ১১ আসামিরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

গৃহবধূকে গণধর্ষণ: সুবর্ণচরের সেই রুহুল আমিন আ. লীগ থেকে বহিষ্কার

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন আব্দুল জলিল, আলতাফ হোসেন, আব্দুল মমিন, আলতাফ, জহুরুল ইসলাম, হোসেন আলী, লিটন মিয়া, ইয়াসিন আলী, আব্দুর রউফ, আব্দুল মিয়া ও বাবলু মিয়া। এরা সবাই বিএনপির কর্মী। এদের মধ্যে ছয়জন এখন সাজা খাটছেন। কিন্তু আব্দুল মমিন, আলতাফ, জহুরুল, আব্দুল মিয়া ও বাবলু মিয়াকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ।

এবিষয়ে পূর্ণিমার বড় ভাই বলেন, কয়েকজন এখনো পলাতক আছে, তাদের ধরা হয়নি। প্রশাসন গাফিলতি করছে। বিচারের যে রায় হয়েছিল, সে রায় পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। আসামিদের প্রত্যেককে যে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ হয়েছিল, সেটিও আদায় করা যায়নি। মেয়েটির ভাই বলেন, ‘এই টাকা আমাদের দেওয়ার কথা ছিল, সেটা আমরা পাইনি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলওয়ার কৌশিক আহমেদ বলেন, যে পাঁচজন পলাতক, তাদের ধরতে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে তারা এলাকাতেও আসেনি।

সারাবাংলা/এসএমএন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন