বিজ্ঞাপন

মায়ের কোলে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ি দিতে পারবে রুমকি?

February 2, 2019 | 8:29 am

।। রাবি প্রতিনিধি ।।

বিজ্ঞাপন

পিকআপ ভ্যানের চালক বাবা ও গৃহিণী মায়ের একমাত্র মেয়ে রাজিয়া সুলতানা রুমকি। জন্মগতভাবেই স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট পা। হুইল চেয়ারেই চলাফেরা ছোটবেলা থেকে। সেই প্রতিবন্ধিতা নিয়েই জয় করেছে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের চ্যালেঞ্জ। প্রতিবন্ধী কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ারেও পা রেখেছে। কিন্তু সেখানেই গোল বেঁধেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তলায় বিভাগ, পুরনো ভবনে লিফট বা র‌্যাম্প না থাকায় নেই হুইল চেয়ারে প্রবেশের সুযোগ। এই বয়সে এসেও চল্লিশোর্ধ্ব মায়ের কোলে করে যেতে হচ্ছে বিভাগে। কিন্তু এভাবে কি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করতে পারবে রুমকি? আবেদন-নিবেদন করেও বিভাগ পরিবর্তন করে ভবনের নিচতলায় ক্লাস হয়— এমন কোনো বিভাগে আসতে না পেরে সেই প্রশ্নটিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রুমকি ও তার পরিবারের সদস্যদের মনে।

রুমকির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুমকির বাড়ি রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায়। বাবা হাফিজুর রহমান একজন পিকআপ ভ্যানচালক। মা নাজনীন বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রুমকি বড়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত। মায়ের কোলে চড়েই তাকে যেতে হয়েছে ক্লাসে। সেই অবস্থাতেই পাড়ি দিয়েছেন প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। ২০১৬ সাল রাজশাহী বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজ থেকে এএইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রুমকি। মেধা আর অদম্য মনের জোরে ভর্তি যুদ্ধেও জয়ী হয়ে স্থান করে নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রতিবন্ধী কোটায় উর্দু বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান রুমকি। ভর্তি গিয়ে দেখেন, বিভাগটি শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের তিন তলায়। কিন্তু পুরনো সেই ভবনে নেই র‌্যাম্প। ফলে মা কিংবা অন্য কারও কোলে চড়ে তাকে ঢুকতে হয় বিভাগে। জানা গেল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মাঝেমধ্যে হুইল চেয়ারসহ রুমকিকে বয়ে নিয়ে যান তিন তলার সিঁড়ি।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন রুমকি। কিন্তু বিধি বাম। উর্দু থেকে আরবি বিভাগে মেলে সুযোগ, সেই আরবি বিভাগের কার্যক্রমেও চলে একই ভবনের তিন তলায়! এ অবস্থাতেই মায়ের কোলে চড়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মায়েরও তো বয়স হয়েছে। তিনিই বা কতদিন, কতবার মেয়েকে কোলে করে ক্লাসে নিয়ে যেতে পারব্নে— নিজেই যেন নিজেকে প্রশ্ন করেন রুমকি।

রুমকির মা নাজনীন বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করেছি, ভবনের নিচতলার কোনো বিভাগে যেন রুমকিকে ট্রান্সফার করা হয়। ওই শহীদুল্লাহ্ ভবনেরই নিচতলায় রয়েছে বাংলা বিভাগ। সেখানে রুমকি ভর্তির সুযোগ পেলে তার ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ঝামেলা অনেকটাই কমে বলে মনে করছেন নাজনীন বেগম।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, উপ-উপাচার্যের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। আর বর্তমানের আরবি বিভাগের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর বিভাগ পরিবর্তনের আবেদনও করেছেন। যদিও বুঝতে পারছেন না, এই আবেদনে কাজ কতটুকু হবে।

নাজনীন বেগম বলেন, রুমকি যেদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করে সেদিন থেকেই ওকে (রুমকি) কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু করি। এখন বয়স হয়েছে। মেয়েকে কোলে নিয়ে তিন তলায় উঠতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছি। এখন আবেদন করেছি বাংলা বিভাগে ওকে স্থানান্তরের জন্য। বিভাগটি নিচ তলায়। সেখানে সুযোগ পেলে রুমকির জন্য পড়ালেখা চালানো সহজ হতো।

রুমকি নিজেও বলছেন, তার মায়ের পক্ষে এভাবে প্রতিদিন তাকে তিন তলা বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত ক্লাস না করলে পরীক্ষায় ভালো করাটাও কঠিন। তাই নিচ তলায় বাংলা বিভাগে সুযোগ পেলে খানিকটা স্বস্তি পেতেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরবি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, রুমকির বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করেছি। এখন প্রশাসন চাইলে হবে।

বিজ্ঞাপন

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক বলেন, রুমকির বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপকমিটিকে বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়ে জানিয়েছিলাম। কিন্ত উপকমিটি বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, বিভাগ পরিবর্তন একটু জটিল প্রক্রিয়া। আপাতত রুমকি ওই বিভাগেই ক্লাস করুক। তবে শিগগিরই উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলে রুমকির জন্য একটি ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হয়ে পড়া ভবনগুলোতে র‌্যাম্প ও লিফটের সুবিধা না থাকলেও অন্তত নতুন ভবনগুলোতে এ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় যেহেতু শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তাই তাদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করাটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
৩০ স্কুলছাত্রের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার, শিক্ষক গ্রেফতার‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিলে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়’ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ: হাতিয়ে নিল ২৫ লাখ টাকাকেমিক্যাল ব্যবসার আড়ালে মদের কারবার, গ্রেফতার ৩অতিরিক্ত ১দিন থাকাই কাল হলো জিহাদের, দুর্ঘটনায় গেল প্রাণচট্টগ্রাম নগর আ. লীগের সম্মেলনের রোডম্যাপ দিলেন হানিফ২ গ্রেনেড: একটি ভেসে এল ড্রেনে, আরেকটি মিলল বাগানেপাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ২৫০৫ কোটি টাকার প্রিফারেন্স শেয়ার অনুমোদনইউপি চেয়ারম্যানের জামিন হয়নি, জেলে গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশঘূর্ণিঝড় ‘রিমেল’: খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র সব খবর...
বিজ্ঞাপন