বিজ্ঞাপন

নুসরাত হত্যায় প্রশাসনের জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি

May 1, 2019 | 10:48 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যায় জড়িত প্রত্যেকের বিচার দাবি করেছেন যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোট। বিশেষ করে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রশাসনের ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ‘জাগো মানুষ, জাগো বহ্নিশিখা’ স্লোগানকে সামনে রেখে যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের ব্যানারে ঢাকা থেকে সোনাগাজীতে রোডমার্চ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিমকে গ্রেফতার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

নুসরাত হত্যাকাণ্ডে পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার দায়িত্বে গাফিলতির কথাও। প্রশাসনের এসব ব্যক্তিকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারলে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

এই হত্যাকান্ডে পুলিশের ভূমিকা কি ছিলো তা নিয়ে খুব শীঘ্রই গণতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করবে বলেও জানান যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের আহ্বায়ক শিবলি হাসান।

এর আগে, সকাল ৭টায় ঢাকার শাহবাগ থেকে যাত্রা শুরু করে রোডমার্চটি বিকেল ৩টায় সোনাগাজীতে পৌঁছায়। রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে নুসরাতের কবর জিয়ারত করেন। তারা সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে বিকেলে জোটের আহ্বায়ক শিবলি হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, মানবাধিকার কর্মী অপরাজিতা সঙ্গীতা, ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-টেরোরিজম অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক জিন্নুরাইন উল্লাস, ঢাবি জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদুর রাহাত, সমাজকর্মী মাহফুজা হকসহ অন্যরা।

সমাবেশে অংশ নেয় বিভিন্ন স্থানীয় সংগঠন, আল-হেলাল একাডেমীর শিক্ষার্থীরাসহ স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এবং স্থানীয়রা। এ সময় তারাও নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানায়।

এর আগে নুসরাতের কবরস্থান সংলগ্ন আল হেলাল একাডেমি বিদ্যালয়ের সামনেও সমাবেশ করা হয়। পরে সোনাগাজি থেকে ফেরার পথে ফেনীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পথসভা করে যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের নেতারা।

প্রতিবাদে অংশগ্রহণ বিষয়ে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে যে কোন নারী নির্যাতনের ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই আমি মনে তাগিদেই প্রতিবাদ জানাই,। আমরা কুমিল্লা, ফেনী, সোনাগাজীতে কয়েকটি পথসভা করি যেখানে স্থানীয় প্রচুর মানুষ ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। আমরা অবিলম্বে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করি ও দ্রুত তা কার্যকরের দাবি জানাই।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যান অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারী শামীম, জাবেদ, জোবায়ের, পপি ও মনি। তারা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ নুসরাতকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত।

এর আগে, নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষ সিরাজ কারাগারে থেকেই সহযোগীদের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে চাপ ও হুমকি দেন নুসরাতের পরিবারকে। নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে নিতে রাজি না হলে নুসরাতকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন সিরাজ।

গত ১০ এপ্রিল থেকে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই। এ পর্যন্ত ২১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ৯ জন।

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন