বিজ্ঞাপন

পরিচালনা কমিটির ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তে অচলাবস্থা এমইএস কলেজে

May 2, 2019 | 10:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিয়ম না মেনে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দিতে আগ্রহী চট্টগ্রামের বেসরকারি ওমরগণি এমইএস কলেজের পরিচালনা কমিটি। কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এই সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু পরিচালনা কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনড়। এর ফলে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কলেজ পরিচালনা কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করতে প্রথমে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতা বন্ধ করে দেয়। দ্বন্দ্ব আরও বাড়ার পর কলেজের এমপিওভুক্ত ২৮ জন এবং খণ্ডকালীন ২৬ জনসহ ৫৪ শিক্ষকেরই বেতন গত তিনমাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে গেছে, উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এখন নিয়মিত থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছে।

কলেজে অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনমাস ধরে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ আছে। এমপিওভুক্ত এবং খণ্ডকালীন শিক্ষকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা আরও জটিল হচ্ছে। কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, স্থায়ী অধ্যক্ষ আসলে তিনি সবকিছুর সমাধান করতে পারবেন।’

কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনারের সুপারিশেই খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তেই খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি আছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। তাদের অভিযোগ- খণ্ডকালীন শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের একের পর সিদ্ধান্তে সরকারি বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। এতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা এবং অধিকারও খর্ব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিভাগীয় কমিশনার বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলার এখতিয়ার আমার নেই। এটা বিভাগীয় কমিশনার স্যার বলতে পারবেন। তবে এতটুকু বলতে পারি- কলেজে জটিলতা তেমন কিছু নেই। এমপিওভুক্ত এবং নন এমপিওভুক্তদের মধ্যে যে সমস্যা, সেটা আশা করি বিভাগীয় কমিশনার স্যার এলে নিরসন হয়ে যাবে।’

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ) এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকা’র ধারা-১৩ অনুযায়ী শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা তাদের এমপিওভুক্তির ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন

এমইএস কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক আবু নঈম ইব্রাহিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় বলা আছে, শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাই জ্যেষ্ঠতা পাবেন। অথচ সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে খণ্ডকালীনদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এমপিওভুক্তদের কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনকি খণ্ডকালীনদের পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তিরও আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু মাউশি সেটা আমলে নেয়নি।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালে কলেজের সাত খণ্ডকালীন শিক্ষককে পূর্ণকালীন দেখিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়। মাউশির সহকারী পরিচালক ফারহানা আক্তার স্বাক্ষরিত ২৬ নভেম্বরের এক চিঠিতে ওই আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যাদের এমপিওভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে তারা খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

কিন্তু এরপরও কলেজ পরিচালনা কমিটি খণ্ডকালীনদের সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জানান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের কলেজ তহবিল থেকে প্রাপ্য ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের জন্য ভাতা চালু করা হয়েছে। এরপর গত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিনমাস ধরে বেতনও বন্ধ আছে সব শিক্ষকের।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক আবু নাঈম ইব্রাহিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি অপমানজনক। ভাতা ছাড়া আমরা বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম। এখন তিন মাস ধরে আমাদের বেতনই দেওয়া হচ্ছে না।‘

বেতন বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল আলম নিজামী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেতনের সিট তৈরি করে দেননি, তাই বেতন হয়নি। এতে তো কলেজ পরিচালনা কমিটির কোনো দায় নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের সিট জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই সিটে বারবার বলার পরও খণ্ডকালীন শিক্ষকেরা স্বাক্ষর করেননি। তাদের স্বাক্ষর নেই দেলে সভাপতি মহোদয়ও স্বাক্ষর করেননি। এ জন্য বেতন হয়নি। এরপর দুইমাস আমিও আর বেতনের সিট জমা দিইনি।’

জানতে চাইলে এমইএস কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক মো. নবী হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজে আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে সবাই কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম মানেনি। আমরা পরীক্ষা দিয়েছি, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি, অথচ নিয়োগপত্রে লিখে রেখেছে খণ্ডকালীন। এখন যখন পরিচালনা কমিটি সেই ভুল শুধরে আমাদের স্থায়ী করতে চাচ্ছে, তখন এমপিওভুক্তরা সেটা মানছেন না। এতে সমস্যা হয়েছে।’

নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডে ওমরগণি এমইএস কলেজের অবস্থান। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে দু’টি পক্ষ তৈরি হয়েছে। একপক্ষ আরেকপক্ষের বিরুদ্ধে বারবার থানায় অভিযোগ নিয়ে আসে। আমি তাদের শিক্ষাবোর্ড কিংবা মাউশি’র কাছে গিয়ে এসব সমস্যা সমাধান করতে বলেছি। পুলিশের পক্ষে তো তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’

এমইএস কলেজে অচলাবস্থার বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পুরো বিষয় যাচাইবাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন