বিজ্ঞাপন

‘দুর্নীতির অভিযোগ থেকে পার পেতে ঘুষ অপরাধের মাত্রা গুরুতর করে’

June 11, 2019 | 9:45 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঘুষ লেনদেনে জড়িত দুই পক্ষই সমানভাবে দায়ী। বিশেষ করে যখন কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির অভিযোগ থেকে পার পেতে ঘুষে দেন, তখন তার অপরাধের মাত্রা আরও গুরুতর হয় বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছে, পুলিশ প্রশাসন এখনো কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তারা তদন্ত করে দেখার কথা বললেও সেটা কবে শুরু বা শেষ হবে তা আমরা জানি না। আমরা এটাও জানি না যে শেষ পর্যন্ত এই অভিযোগ ধামাচাপা পড়ে যাবে কি না।’

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ও পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের মধ্যে ঘুষ লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে উভয়ের ক্ষেত্রে তদন্ত শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিজ্ঞাপন

টিআইবির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই; প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুদকের পক্ষে এর দায় কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

একইসঙ্গে, ঘুষ লেনদেনে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার সকল অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়ও পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি দুদকের। দুদক ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ উভয়কেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ওপর জনগণের ক্ষয়িষ্ণু আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’ থেকে অব্যাহতি পেতে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান রহমান ঘুষ দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার পরও তার স্বপদে বহাল থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, ‘নারী নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকার পরও যখন এই পুলিশ কর্মকর্তা স্বপদেই বহাল রয়েছেন, তখন এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশ প্রশাসন তাদের ওপর জনগণের আস্থা সম্পর্কে কোনো তোয়াক্কা করে কি না সেটাই এখন প্রশ্ন।’

একইসঙ্গে ‘ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না- দুদকের এমন অবস্থান আমাদের শুধু হতাশই করেনি বরং আমরা বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত বোধ করছি। একজন উচ্চপদস্থ তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল দুদক একে একটা প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে এবং তাদের অন্য কোনো কর্মকর্তাও যে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত নন তা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান, বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। দুদক নিজেই যদি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, তাহলে তাদের কার্যক্রমের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে কি করে?’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে আমরা জেনেছি যে ‘তথ্য পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগে’ খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং দুদকের তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সুপারিশ করেছে। দুদকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘকালের পুঞ্জীভূত সমস্যা, যা সর্বজন বিদিত। দুদক কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তা যে বাস্তবে কোনো কার্যকর ফল দেয়নি, তার প্রমাণ এই আলোচিত ঘটনা। তাই এ ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে রীতিমত শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত করতে না পারলে দুদকের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হবে।’

একইসঙ্গে, দুর্নীতিরও আরও ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষায়িত কর্তৃপক্ষের ওপর দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই তদন্ত শেষ করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়া দুদকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের কর্মকর্তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার কার্যকর চর্চা এবং তদানুযায়ী জনবল ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এই ঘটনায় জড়িত দুপক্ষের বিরুদ্ধেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাযোগ্য বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জবাবদিহিতা নিশ্চিতে দুদকের ভূমিকার অপরিহার্যতা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন ড. জামান।

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন