বিজ্ঞাপন

১৪শ কোটি টাকায় পয়ঃশোধনাগার হচ্ছে উত্তরায়

August 4, 2019 | 5:12 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা ও সংলগ্ন এলাকার সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে তুরাগ নদীর তীরে ২০ হেক্টর জমিতে একটি আধুনিক পয়ঃশোধনাগার গড়ে তুলতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে এই পয়ঃশোধনাগার বা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রায় ১৪শ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীন উত্তরা এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি উপস্থাপন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা রয়েছে। বাকি ৮০ শতাংশ এ ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব এলাকার লেক, খাল ও নদীর পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। এতে করে এলাকাবাসীকে বসবাস করতে হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

এর মধ্যে পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি ‘সুয়েজ মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় উত্তরা ও সংলগ্ন এলাকার সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি এসটিপি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি নির্মাণের জন্য বিদ্যমান টঙ্গী-মিরপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন তুরাগ থানার ধউর মৌজায় ২০ হেক্টর জমি নির্বাচন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই জমি অধিগ্রহণের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হলে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রথমবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত  জমির প্রাক্কলন পাঠাতে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। জবাবে জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত জমিটি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া ভূমির মালিকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করায় প্রস্তাবিত জমিতে অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে বলে জানানো হয়।

পরে ওই জমির বিপরীতে হাইকোর্ট একাধিক রিট পিটিশন মামলা চলমান ও ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিকল্প প্রস্তাব পাঠানোর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিকল্প স্থান নির্ধারণের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকা ওয়াসা জানতে পারে, রাজউক ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ডিএপি) সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য দিয়াবাড়ি, নলভোগ ও ধউর মৌজায় প্রয়োজনীয় ভূমি চিহ্নিত রয়েছে। কিন্তু এই জমির একটি বড় অংশ সরকার অবমুক্ত করে দিয়েছে। বাকি অংশে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রয়োজনীয় জমি সংকুলান হবে না বলে রাজউকের সঙ্গে আলোচনা করে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যানের জন্য চিহ্নিত অংশের পূর্ব পাশের কিছু জমিসহ প্রায় ৫৩ একর জমি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জরিপ করে রাজউকের ছাড়পত্র নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে রাজউক অনুমোদিত জমিতে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ আনুষাঙ্গিক অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে ৫৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সিএস নকশা, আরএস নকশা ও সিটি নকশাসহ ল্যান্ড শিডিউল তৈরি করে প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, জেলা প্রশাসক দফতর থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুত করে সে অনুযায়ী এই ভূমির চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, সাইট অফিস ও সিকিউরিটি গার্ড শেড নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পুনর্গঠিত প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন তুরাগ থানা এলাকায় ৫৩ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে পুরো উত্তরা ও সংলগ্ন এলাকার জন্য সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পয়ঃশোধনাগারটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন