বিজ্ঞাপন

সিএমপিতে ‘হ্যালো ওসি’র পর এবার ‘হ্যালো পুলিশ কমিশনার’

November 28, 2019 | 8:33 am

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাধারণ মানুষের যেকোনো সমস্যা-অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার জন্য ফেসবুকে ‘Hello Police Commissioner’ পেজ খুলেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান নিজেই নিচ্ছেন অভিযোগ এবং নিজেই সমাধানে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সিএমপিতে গত পাঁচ মাসে জনপ্রিয় হওয়া ‘হ্যালো ওসি’ নামে একটি কর্মসূচির পথ ধরে এসেছে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘পুলিশ সেবা সপ্তাহ’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় স্থাপন করা হয় ‘হ্যালো ওসি’ বুথ। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনের ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে চালু করা এই বুথে এক সপ্তাহ ধরে সরাসরি সাধারণ মানুষের অভিযোগ শোনা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো এ ধরনের ব্যতিক্রমী পুলিশী কর্মকাণ্ড বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দেয়। ছয় মাস পর এই ‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রম পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দেন ওসি মহসীন।

‘অভিযোগ নিয়ে থানায় আসতে হবে না, পুলিশ যাবে মানুষের ঘরে’— এমন চিন্তা থেকে শুরু করা ‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রম পরবর্তী সময়ে এমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে তা নগরীর ১৬ থানায়ও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই কার্যক্রম এখনো চলছে।

এর ধারাবাহিকতায় ‘হ্যালো পুলিশ কমিশনার’ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হ্যালো ওসি কার্যক্রমটা তো খুব জনপ্রিয় ও ফলপ্রসূ হয়েছে। সেটা মাথায় রেখেই মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করতে নতুন একটি কর্মকাণ্ড শুরু করেছি। একটা ফেসবুক পেজ খুলেছি এবং আমি নিজেই সেটি অপারেট করছি। চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ আমার ফেসবুক পেজে যদি কোনো সমস্যার কথা জানায়, আমি সরাসরি সেটা বিবেচনায় নিচ্ছি এবং সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছি। আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছ থেকে আরও বেশি সেবা পাবে এবং দূরত্বটা কমে আসবে।’

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ‘পুলিশ সপ্তাহ’ উপলক্ষে কোতোয়ালি থানায় ‘হ্যালো ওসি’ বুথ স্থাপন করা হয়। চারপাশে পুলিশের ব্যানার লাগানো একটি ভ্রাম্যমাণ বুথে ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিজেই বসে এক সপ্তাহ ধরে মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনেন এবং সমাধান দেন।

ঠিক ছয় মাসের মাথায় ১০ জুলাই থেকে এই ভ্রাম্যমাণ বুথটিকে পাড়ায় পাড়ায় নিয়ে যেতে শুরু করেন ওসি মহসীন। হ্যালো ওসি’র বুথ প্রথমবার যায় নগরীর মাদকের আখড়া খ্যাত জামতলা বস্তিতে। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে কোতোয়ালি থানা এলাকায় একেকটি পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ বুথে বসে অভিযোগ গ্রহণ শুরু করেন তিনি।

‘হ্যালো ওসি’ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যারা মাঠে দায়িত্ব পালন করি, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের বিষয়ে সিনিয়র স্যারেরা আমাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। মূলত স্যারদের পরামর্শেই আমি বিভিন্ন ধারণা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হই। আমি যখন বাকলিয়ার ওসি ছিলাম, তখনও মসজিদে-মসজিদে গিয়ে মাদক, ইভটিজিং ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণা করেছি। এতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেছি। এরপর থেকে আমি এই কার্যক্রম মসজিদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দিই। ফেসবুক যেহেতু এখন যোগাযোগের খুবই সহজ এবং দ্রুত মাধ্যম, তাই কোতোয়ালি থানায় যোগ দেওয়ার পর অ্যাকাউন্ট ও পেজ খুলে প্রচারণা শুরু করি। এতেও সাধারণ মানুষের সাড়া পেয়েছি এবং পাচ্ছি। এর ধারাবাহিকতায় আমি হ্যালো ওসি কার্যক্রম শুরু করি।’

বিজ্ঞাপন

‘আমাদের বাস্তবতা এমন যে, অনেক শিক্ষিত লোকজনও থানায় অভিযোগ নিয়ে আসাকে বিড়ম্বনা মনে করে। অথচ থানায় যে সেবাপ্রাপ্তি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ, সেটা মানুষকে বোঝানো যায় না। এই অবস্থায় মোবাইল বুথের মাধ্যমে আমি থানাকে মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করি। থানার ওসি নিজে যখন পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে মানুষের মাঝে চেয়ার নিয়ে বসে যান, তখন মানুষও পুলিশের কাছে আসতে উৎসাহী হন। হ্যালো ওসি’র মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদকসেবী ও বিক্রেতা মাদক ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরেছেন। অনেক মা-বাবা মাদকসেবী সন্তানকে ভালো পথে আনার আশায় পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছেন। আর চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার সমাধানের পথও খুলে দিয়েছে হ্যালো ওসি কার্যক্রম,’— বলেন ওসি মহসীন।

কোতোয়ালি থানার চালু করা ‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রম মানুষের মাঝে সাড়া ফেলায় গত ১৭ জুলাই মাসিক অপরাধ সভায় সিএমপি কমিশনার নগরীর ১৬ থানার ওসিকে মাসে অন্তত একবার নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে এই কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেন। চট্টগ্রামে বিশেষ অপরাধ সভায় এসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারীও এই ‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। এছাড়া ওসি মহসীনের ‘জনবান্ধব পুলিশিং’ দেখতে আসেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারাও।

এই অবস্থায় গত ১৬ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে ‘Hello Police Commissioner’ ফেসবুক পেজ। শুরু থেকেই এই ফেসবুক পেজও মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) আবু বক্কর সিদ্দিক।

এডিসি আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত এই পেজে লাইক দিয়েছেন ৫ হাজার ৪১৪ জন। সাড়ে ৫ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী এই পেজ ফলো করছেন। প্রতিদিন পেজের মেসেজ বক্সে কিংবা পোস্টের কমেন্টে অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে। আমরা এসব অভিযোগ নোট করে কমিশনার স্যারের কাছে দিচ্ছি। স্যার নিজেও সেসব অভিযোগ নিচ্ছেন এবং সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সমাধানের নির্দেশনা দিচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন