বিজ্ঞাপন

নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম

February 21, 2020 | 8:00 pm

জসিম মজুমদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে নানা প্রতিবন্ধকতায় ব্যাহত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম। বছর যত গড়াচ্ছে তত বাড়ছে প্রতিবন্ধকতা। সরকারের ইতিবাচক এ উদ্যোগকে মাঠ পর্যায়ে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয়ের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদরী ও গারো সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিতরণ শুরু করে সরকার। মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও চর্চার দাবিতে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল হিসেবে সরকার উদ্যোগ নিলেও মাঠ পর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতায় আলোর মুখ দেখছে না মাতৃভাষায় শুরু হওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা।

প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব, শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক সংকট, শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়নসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে মাতৃভাষায় চালু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিবন্ধকতা ও উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় এগোচ্ছে না প্রশংসনীয় এ উদ্যোগ।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পানখাইয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুনুপ্রু মারমা বলেন, তার বিদ্যালয়ে চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা তিন সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী রয়েছে। কিন্তু শ্রেণীকক্ষ রয়েছে মাত্র একটি। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষায় লিখিত বই পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাতৃভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার যে উদ্যোগ তা সফলতার মুখ দেখছে না।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার দক্ষিণ খবংপুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয়া খীসা বলেন, তার স্কুলে যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তারা কেউই মাতৃভাষায় অভিজ্ঞ নন। ফলে সরকার যেসব বই দিয়েছে তা স্কুলে রাখা আছে- ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে কেউ এখনো মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ পাননি। শিক্ষকেরা নিজেরা যদি বর্ণমালা না চিনেন, না জানেন, তবে শীক্ষার্থীদের পড়াবেন কীভাবে?

এদিকে জাবারাং কল্যাণ সমিতির উন্নয়নকর্মী বিনোদন ত্রিপুরা বলেন, সরকার অনেক শিক্ষককে মাতৃভাষার ওপরে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ কম সময়ের হলেও তারা মাতৃভাষায় পড়াতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় শিক্ষক বদলী হয়ে যাওয়ায় অভিজ্ঞ ভাষা শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে বিদ্যালয়গুলো। ফলে ব্যাহত হচ্ছে মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত এনসিটিবি’র প্যানেল মেম্বার মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, অনেকেই নিশ্চিত নন যে তারা কীভাবে বইগুলো পড়াবেন। ভাষা বিশেষজ্ঞ শিক্ষক তৈরি, প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলাসহ এলাকা ভিত্তিক-সম্প্রদায় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, বদলী বা পদায়ন করতে হবে। না হলে কাগজে কলমে মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু হলেও বাস্তবে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়িতে ৭০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ হাজার ৫৫৯ জন। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়েছে মাত্র তিন বছর হলো। এখনো সব বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দেওয়া সম্ভব হয়নি। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক দেওয়া হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সফলতা একদিনেই আসবেনা। সমস্যার উদ্ভব হবে, সমাধানও হবে। তবে একদিন সফলতা আসবেই।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন