বিজ্ঞাপন

রোগী নেই অজুহাতে চাকরি কেড়ে নেওয়া হলো ৩৪ স্বাস্থ্যকর্মীর

April 9, 2020 | 9:04 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে ৩৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আকস্মিক অব্যাহতির আদেশে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দীর্ঘসময় ধরে ওই হাসপাতালে কাজ করে আসা স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাদের অধিকাংশের বয়স পঞ্চাশের ওপরে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হাসপাতালে রোগী নেই। আয়ের পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। সেজন্য যাদের বয়স হয়ে গেছে, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে অভাব। এ পরিস্থিতিতে ৩৪ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাকে অমানবিক উল্লেখ করে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হাসপাতালটির কর্মচারীরা। চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশিতে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে (বিবিএমএইচ) এ ঘটনা ঘটেছে। ৩৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা আছে। একইসঙ্গে ১৯৮৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি)। বিবিএমএইচ প্রথমে ইউএসটিসি’র অধীনে ছিল। পরে ইউএসটিসি আলাদা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একমাসের সময় দিয়ে ৩৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে অব্যাহতির নোটিশ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন এইড নার্স, ১৫ জন আয়া-ক্লিনার। নোটিশে তাদের আগামী ৫ মে থেকে অব্যাহতি আদেশ কার্যকর হবে বলা হয়েছে। অব্যাহতির নোটিশ পাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায় প্রত্যেকেই ওই হাসপাতালে কমপক্ষে ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।

ইউএসটিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মানিক মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে লকডাউন চলছে। খাদ্যের অভাব নিয়ে মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে। এমন সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩৪ জনের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। এমনকি তাদের চলতি মাসের বেতনও আটকে দিয়েছে।’

জানতে চাইলে বিবিএমএইচ’র পরিচালক (প্রশাসন) ডা. কামরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এইড নার্সদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই নন-মেট্রিক। কেউ সিক্স পাস, কেউ সেভেন পাস এমন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে, রেজিস্টার্ড ডিপ্লোমা নার্স ছাড়া কেউ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে না। এরা আয়া-ক্লিনার হয়ে হাসপাতালে ঢুকেছিল, পরে পদোন্নতি পেয়ে এইড নার্স হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আয়া-ক্লিনারদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এদের সবার বয়স পঞ্চাশের ওপরে। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। কয়েকদিন আগে একজন কাজ করতে করতে হার্টফেল করে মারা গেছেন। হাত থেকে জিনিস ফেলে ভেঙে ফেলেন। আবার কাজ করেন না, কিন্তু ইউনিয়ন করেন। তাদের আমরা চাকরি থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি। তবে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, অর্জিত ছুটির টাকা এবং ‍দুই মাসের বেতনসহ সব প্রাপ্য দেওয়া হচ্ছে।’

করোনা নিয়ে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে ডা. কামরুল বলেন, ‘চাকরিচ্যুত নয়, স্বাভাবিক নিয়মে অব্যাহতি দিচ্ছি। আর আমরা শুধু সাইনিং অথরিটি। সিদ্ধান্ত ওপর থেকে হয়ে আসে। যাদের অব্যাহতি দিচ্ছি, তারাও চান পাওনা বুঝে নিয়ে অবসরে যেতে। তাদের অনেকের ছেলেমেয়ে আবার হাসপাতালে চাকরি করে। আর আমাদের বিষয়টাও তো বুঝতে হবে। হাসপাতালে রোগী নেই। মাত্র ২৪-২৫ জন রোগী আছে। আয় নেই, হাসপাতাল চালাব কী করে?’

কর্মচারীদের নেতা মানিক মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ’৩৪ জন এইড নার্স ও আয়া-ক্লিনারকে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে আমরা শিক্ষা উপমন্ত্রী, মেয়র, জেলা প্রশাসক, সিএমপি কমিশনার, র‌্যাব-৭ এবং খুলশী থানায় চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। শনিবার আমরা মিটিংয়ে বসব। সেখান থেকে আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

করোনা মোকাবিলায় গঠিত স্বাচিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজুর রহমান এই চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপর বিষয়টি সবার নজরে আসে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেলের মালিকেরা একদিকে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল খোলা রেখে এই করোনা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন, অন্যদিকে ইউএসটিসি তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকুরিচ্যুত করছে। এটা কাম্য নয়। ইউএসটিসির এটা উচিত হচ্ছে না। তারা কারেও কথা শুনছে না।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন