বিজ্ঞাপন

ভাষানীড়ে থাকতে পারবেন করোনাযোদ্ধারা, ডিসিকে প্রস্তাব

May 8, 2020 | 12:22 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের বগুড়ার ‘ভাষানীড়’ বাসাটি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় নিয়োজিত সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনের জন্য ব্যবহারে ছেড়ে দিতে চান পরিবারের সদস্যরা। বগুড়ার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের ছেলে রাহুল গাজী। বলেছেন, চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা বাড়িটি ছেড়ে দেবেন।

বিজ্ঞাপন

রাহুল গাজীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার (৭ মে) কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাই, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যযোদ্ধা যারা আছেন, তাদের আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে আমরা বাসাটি ছেড়ে দিতে রাজি আছি। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। লিখিতভাবে প্রস্তাবও দিয়েছি।’

রাহুল গাজী বলেন, আমার বাবা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দেশের এই সংকট মুহূর্তে আমাদেরও কিছু করা উচিত। তাই আমরা পারিবারিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তো ঢাকায় থাকি। তাই ডিসির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। পরে মেইল করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, বিষয়টি তার বিবেচনায় থাকবে। প্রয়োজন হলে তিনি আমাদের অবহিত করবেন। ওই সময় ডিসির কাছে চারি পাঠিয়ে দিলেই হবে।

‘ভাষানীড়’ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভাষা সৈনিক গাজীউল হকের সন্তান বলেন, গোয়ালগাড়ির নামাজঘর এলাকায় ভাষা সৈনিক গাজীউল হক সড়কে বাসাটির অবস্থান।প্রায় পৌনে দুই বিঘা জমির ওপর বাসাটির অবস্থান। চারদিক বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। বাসা পাশে একটি ফাঁকা মাঠ রয়েছে। বাসার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ২৪টি রুম, দুইটি বড় রান্না ঘর ও আটটি টয়লেট আছে। প্রতিটি রুমে সামাজিক দূরত্ব মেনেও অনায়াসে তিন থেকে চার জনের থাকার ব্যবস্থা করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

রাহুল গাজী বলেন, বাসাটিতে ভাষা সৈনিক গাজীউল হক বিদ্যাপীঠ নামে একটি স্কুল রয়েছে। প্লে-গ্রুপ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্কুলটিতে। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে তো সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। ফলেও স্কুলটিও বন্ধ। সে কারণেই আমরা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের আবাসন হিসেবে বাসাটি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি।

রাহুল গাজী বলেন, এই দুর্যোগে যদি বাসাটি স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনে কাজে লাগে, আমরা খুব খুশি হব।

ভাষা সৈনিক গাজীউল হক ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর ছাগলনাইয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পেশাগত জীবনে গাজীউল হক ছিলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। ছিলেন গাজীউল হক প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) চেয়ারম্যান।

২০০৯ সালের ১৭ জুন ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গাজীউল হক। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে নুতনা হক ও সুমানিকা হক এখন প্রবাসী। মেজ মেয়ে সুজাতা হক বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) কর্মকর্তা। ছোট মেয়ে সুতনুকা হক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা। কনিষ্ঠ সন্তান রাহুল গাজী একজন মাইনিং প্রকৌশলী। পাঁচ ভাই-বোন বাবার নামে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন