বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জে দুঃস্থদের সহায় র‍্যাবের আলেপ উদ্দিন

May 17, 2020 | 2:12 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অন্ধকার রাতে বাড়ির দরজায় ঠুকা পড়লো। বাইরে থেকে জানানো হলো, ‘র‍্যাব ১১ থেকে এসেছি’। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই এলিট বাহিনীর কর্মকর্তার এমন ডাক শুনলে স্বভাবতই বাসিন্দার মনে কিছুটা শঙ্কা জাগতে পারত। তবে এই ডাকে বরং উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন বাসিন্দারা। মূলত এলাকার দুঃস্থ-অসহায় কর্মহীন মানুষরা রাত হলেই কান পেতে থাকেন কবে আসবেন র‍্যাব-১১ এর কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন ও তার দল।

বিজ্ঞাপন

দরজায় নক করে বক্তা বললেন, ‘র‍্যাব ১১ থেকে এসেছি, আপনাদের জন্য চালডাল নিয়ে আসছি- আসেন। যাদের চালডাল লাগবে আসেন।’ মুহূর্তেই অপেক্ষায় থাকা কর্মহীন বাসিন্দারা গেট খুলে এসে চাল-ডালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বস্তা সংগ্রহ করলেন। র‍্যাবের কর্মকর্তা জানতে চাইলেন এই বাসায় দুধের বাচ্চা আছে কি না। ‘আছে’ নিশ্চিত হয়ে বাসিন্দাদের হাতে তুলে দিলেন নগদ টাকা।

এটি দেশের করোনাভাইরাসের হটস্পট নারায়ণগঞ্জে গত ৮ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত চলা একটি নিয়মিত চিত্র। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে নারায়ণগঞ্জের অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন র‍্যাব-১১ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ও তার দল। তিনিই এভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সহায়তা চালিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি দিয়েছেন নগদ অর্থ সহায়তাও।

একমাসে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবারে র‍্যাব-১১ এর এই কর্মকর্তা দিয়েছেন ত্রাণ সহায়তা। দিনভর নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেরে রাত হলেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। গাড়ি থেকে নামিয়ে কাঁধে বহন করে তিনি ও তার দল নিয়ে যান ঘরে ঘরে।

বিজ্ঞাপন

একেকটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫ থেকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ লিটার তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, আধা কেজি মুড়ি, ১ কেজি লবণ, ১ থেকে ২ কেজি চিনি, দুইটি সাবান।

গত ৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসের হটস্পট নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণার পরপরই জেলার অসহায় কর্মহীন দুঃস্থরা বিপাকে পড়েন। জেলাটিতে দেশের ভ্রাম্যমাণ শ্রমিজীবী মানুষের আধিক্য থাকায় ও বিপরীতে লকডাউনে কাজ না থাকায় তাদের বেশিরভাগই ছিলেন চরম উৎকণ্ঠায়। তবে আলেপ উদ্দিনের সহায়তায় এই সংকট কাটিয়ে উঠেছেন তারা। সহায়তা পেতে কাউকে কোথাও যেতে হচ্ছে না, বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন আলেপ উদ্দিনের দল। এ তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছেন না সমাজের পিছিয়ে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিংবা অন্ধ-পঙ্গু ছিন্নমূলের কেউই।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই। সবকিছু বন্ধ থাকায় তাদের কাজ নেই। কাজ না থাকার কারণে উপার্জনও নেই, ঘরে খাবার নেই। কিন্তু অনেকেই আত্মসম্মানের কারণে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। ফলে তারা সরকারি ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন র‍্যাব-১১ এর কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন। রাতের বেলায় তার দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসছেন।

ত্রাণ সহায়তা রাতে কেন? আলেপ উদ্দিন জানান, ‘সারাদিন অফিসের কাজ শেষে আমরা রাতের বেলা ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। দিনের বেলায় সাধারণত আমাদের নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া রাতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ভালোভাবে মেনে চলা যায়। যাদের ঘরে খাবার থাকে, তারাতো আর না খেয়ে রাত জেগে রাস্তায় বসে থাকছেন না। যার আসলেই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই সবকিছু বিবেচনায় রাতকে বেছে নিয়েছি কোনো পেশাগত অর্পিত দায়িত্ব নয়, বরং নিজের মানবিক বোধ থেকেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।’

তিনি আরও বলেন,  ‘আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। করোনাভাইরাসের কারণে অচলাবস্থা যতদিন থাকবে, ততদিন চেষ্টা করব এই উদ্যোগ চালিয়ে নিতে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন