বিজ্ঞাপন

নমুনা না দিয়েও ‘করোনা’ পরীক্ষার ফল পেলেন চিকিৎসক

May 23, 2020 | 6:07 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আক্তার (ছদ্মনাম)। নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কোনো উপসর্গও নেই তার। তাই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনাও দেননি তিনি। কিন্তু বুধবার (২০ মে) হঠাৎ করেই তার মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস আসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে (এমআইএস)। সেখানে তার কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানানো হয় নেগেটিভ। ঢাকার বাসিন্দা হলেও সেই এসএমএসে দেখানো হয় ময়মনসিংহের নাম। তিনি একজন নারী হলেও এসএমএসে তাকে পুরুষ বলেই উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, ডা. সাদিয়া আক্তার (ছদ্মনাম) ২০ মে এসএমএসটি পান। সেখানে তার নাম ও বয়স উল্লেখ নেই। কিন্তু এসএমএসে উল্লেখ করা হয় তিনি একজন পুরুষ এবং তার বাড়ি ময়মনসিংহ। এমনকি ১৮ মে বেলা ১২ টা ৩০ মিনিটে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয় সেই এসএমএসে।

নমুনা পরীক্ষা না করেও ফলাফল পাওয়ার মতো ঘটনা অনেকটা অবাক করা হলেও এসএমএসে ভুল তথ্য দেওয়াটা আসলে নতুন কিছু না বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন। একজন ভুক্তভোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে এসএমএস’র মাধ্যমে। সেখানে তার নাম ও বয়স ঠিক থাকলেও তাকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েও দুর্ভোগে পড়েন। কষ্ট করে নমুনা দিয়ে এলেও ফল পায় ভুল। একটা এসএমএস কী সঠিকভাবে দেওয়া খুব কষ্টের কাজ?

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘হয়তোবা ডাটা এন্ট্রিতে মিসটেক হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরাও কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান করে ফেলতে পারব।’

কিন্তু যিনি নমুনাই পরীক্ষা করাননি তার কাছে কীভাবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল গেল? আর তার মোবাইল নম্বরই বা কীভাবে পেল?- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমনটা তো হওয়ার কথা কথা না। এরকম হওয়া খুবই অস্বাভাবিক। হয়তোবা এমন হতে পারে যে, যখন নম্বরটা তোলা হয় তখন হয়তো কোনো একটি ডিজিট প্রেস করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি ঢাকাতেই থাকেন কিন্তু লেখা এসেছে ময়মনসিংহ। তিনি একজন নারী; কিন্তু লেখা এসেছে পুরুষ। কিন্তু তার নাম সঠিকভাবেই দেওয়া হয়েছে এসএমএসে। এমনটা কীভাবে সম্ভব?- এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটা টেকনিক্যাল বা ইনস্ট্রুমেন্টাল কোনো ত্রুটি হয়তো হয়েছে। তা না হলে এমন হওয়ার কথা না। এমন কিছু অভিযোগ আমিও পেয়েছি। আপাতত আমি বলছি, মেসেজগুলো স্থগিত রেখে ইনস্ট্রুমেন্টাল এরর যদি থাকে সেগুলো আবার কনফার্ম করে দেখতে। কনফার্ম করার পর মেসেজ দিতে বলেছি।’

এর আগে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেরিতে পাওয়া বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক (এমআইএসস) সমীর কান্তি সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নমুনা পরীক্ষা খুব দ্রুতই করে ফেলেছি। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফলাফল সফটওয়্যারে এন্ট্রি দিতে হয়। তার পরেই সাধারণত মেইলে ও মোবাইলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই এসএমএস বা মেইল যাওয়ার জন্য কাউকে ডাটা এন্ট্রি দিতে হয় ‘

ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের স্বল্পতার কথা জানিয়ে ওই সময় তিনি আরও বলেন, ‘যে হারে আমাদের কাজ হয় তাতে একেকটা সেন্টারে দুই থেকে তিনজন করে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর থাকা উচিত। সে জায়গায় আমরা একজনও দিতে পারিনি। আমাদের যারা ডাটা এন্ট্রি দেয় সেখানে যথাযথ জনবল নেই।’

উল্লেখ্য, ২০ মে দুপুরে কোভিড-১৯ বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা পর ফলাফল স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখা থেকে মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে নিয়মিতভাবে পাঠানো হচ্ছে। এসএমএসটি গ্রামীণফোন গ্রাহকরা ‘এমআইএসডিজিএইচএস’(MISDGHS) শিরোনামে এবং অন্যান্য অপারেটর ব্যবহারকারীরা ০১৭২৯০২৪৬১২ নম্বর থেকে পাচ্ছেন ‘

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল কমিটি ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘এসএমএস প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর, বয়স এবং ঠিকানা নমুনা সংগ্রহের সময় যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএ শাখা থেকে বর্ণিত উপায়ে নিয়মিতভাবে প্রতিটি পরীক্ষার তথ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে। এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসএমএসটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থানে অফিসিয়াল রিপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এসএমএসটি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো অফিসিয়াল এসএমএস হিসেবেও গণ্য হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।

এ বিষয়ে ২০ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘মোবাইল নম্বরে এসএমএস’র মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষার (পিসিআর) রিপোর্ট প্রেরণ’ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন