বিজ্ঞাপন

বাজেট অন্তঃসারশূন্য ও কল্পনাপ্রসূত: বিএনপি

June 12, 2020 | 5:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় সংসদে ঘোষিত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত’ বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বাজেট ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার (১২ জুন) বিকেলে উত্তরার নিজ বাসায় আয়োজিত জুম মিটিংয়ে দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন তিনি। ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের এই বাজেট প্রকৃত অর্থে একটি অন্তঃসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। বাজেট জনবান্ধব হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই। কারণ. জনগণের কাছে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

আরও পড়ুন- এই বাজেট মানুষ বাঁচানোর বাজেট: অর্থমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতির এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’ ঘোষণা করা। তা না করে অর্থমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ৯ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষে আমরা সুনির্দিষ্ট পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা সমৃদ্ধ তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি বাজেট রূপরেখা দিয়েছিলাম। অর্থমন্ত্রী আমাদের সুপারিশ ও দেশের অধিকাংশ শীর্ষ অর্থনীতিবিদের অভিমত উপেক্ষা করে প্রত্যাশিত ‘অসাধারণ বাজেটে’র স্থলে নিতান্তই একটি ‘সাধারণ বাজেট’ ঘোষণা দিলেন।”

‘এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প প্রস্তাব নেই,’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বাংলাদেশকে ‘গরিব দেশ’ বলায় চটলেন অর্থমন্ত্রী

তিনি বলেন, ‘জাতি আশা করেছিল, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন। করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলো জিডিপির মাত্র ১ দশিমিক ৩ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম।’

বরাদ্দ করা অর্থের দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহারের বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, সেসব প্রকল্পগুলোকেই বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরিবহন খাত, বিদ্যুৎ খাতসহ অনেক খাতে বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি ভাষ্যমতে, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তাই  এ অসময় তোড়জোড় করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের কোনো দরকার ছিল না। ১২০০ মেগাওয়াট রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় দেশের সবচেয়ে একক ব্যয়বহুল চাপযুক্ত জল-চুক্তি প্রকল্প, যা রাশিয়ান এক কোম্পানি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিয়ে ওই অর্থ স্বাস্থ্যসহ কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। তা করা হয়নি, কারণ রূপপুর কেন্দ্রের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে চায়নি সরকার।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘মানুষকে বাঁচাতে আয়ের অপেক্ষা না করেই খরচের হিসাব করেছি’

বাজেটে কেবল ‘সংখ্যা’র হিসাব মেলানো হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকেই আয় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বাস্তবতা বিবর্জিত। এনবিআর এ অর্থ আহরণ করতে ব্যর্থ হবে এবং তাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর পক্ষে প্রস্তাবিত ৮৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী এ বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আমদানি, রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। অর্থমন্ত্রী বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। অথচ প্রতিটি দেশই করোনা আক্রান্ত হয়ে মন্দাকবলিত। তাছাড়া কর্মহীন প্রবাসীদের দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ বাজেটে। বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।

এই বাজেটে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ এ বাজেটে দেওয়া হয়েছে, তা দুর্নীতিকে চলমান রাখার আরেকটি প্রয়াস মাত্র। আবাসন খাতের ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিয়ে জমি কেনা ও উন্নয়ন, বিল্ডিং নির্মাণ, নগদ টাকা, ব্যাংকে রক্ষিত টাকা এবং স্টক ডিভিডেন্ড, বন্ড ও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ করে অনৈতিকতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।’

‘মূলত গত এক দশক ধরে সরকারদলীয় যেসব ব্যক্তি নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তাদের টাকা সাদা করার জন্য সরকার এবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বৃদ্ধি করেছে,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেওয়া যেত। কারণ, উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়।’

ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ এখনও আম্পানের ধকল চলছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো মেরামত হয়নি। লাখ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার। সামনে আরও সংকটময় পরিস্থিতি আসতে পারে। এ অবস্থায় এই দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানো উচিত হয়নি বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাসের তেমন কিছুই বলা হয়নি। বরং রাসায়নিক সারের গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষি খাতকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়নি। ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ যুক্ত। এ খাতও যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।’

বাজেটে হাতে তৈরি খাবার, গুঁড়ো দুধ, অনলাইন খাবার, অনলাইন কেনাকাটা, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা খরচ বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতিবছরই বাড়ছে। করোনা সংকটকালে অবরোধ অবস্থায় আমরা দেখছি, এসব সেবা কত প্রয়োজনীয়। এ সময় অনলাইন বেচাকেনা এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো সঠিক হবে না। আমরা অনলাইন কেনাকাটা ও মোবাইল-ইন্টারনেট সেবার বর্তমান ব্যয় বহাল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন