বিজ্ঞাপন

করোনার ক্ষত: ১২ মন্ত্রণালয়ের আরএডিপি ৬০ শতাংশের কম

July 20, 2020 | 12:57 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আঘাতে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে। যে কারণে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) বাস্তবায়নেও দেখা গেছে বেহাল দশা। পরিসংখ্যান বলছে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষেত্রেই এর বাস্তবায়নের হার ৬০ শতাংশের কম। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ০৩ শতাংশ অগ্রগতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে। অবশ্য সেতু বিভাগ আরএডিপি’র প্রায় পুরোটাই বাস্তবায়ন করেছে। তাদের বাস্তবায়ন ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা স্বাধীনতার পর থেকে সর্বনিম্ন।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আইএমইডি সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে সবচেয়ে কম আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ বিভাগের ছয়টি প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দ ছিল ২৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। জুন মাস তথা অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার মাত্র ১৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। এই অর্থবছরে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৪৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৭৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, বাস্তবায়ন হার ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দ ছিল ৪৬৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে এই মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্পে ব্যয় করেছে ২১৭ কোটি টাকা, বাস্তবায়নের হার ৪৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে— জননিরাপত্তা বিভাগ (৫১ শতাংশ), আইন ও বিচার বিভাগ (৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশ), আইএমইডি (৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ), সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় (৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ), যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় (৫৬ দশমিক ১১ শতাংশ), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ), বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ), ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (৫৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (৪৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ)।

বিজ্ঞাপন

আইএমইডি’র সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজ উল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন পায় মার্চ মাসের শেষ দিকে। তারপর আর তেমন কাজ করা যায়নি। কেননা ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। ফলে এপ্রিল, মে ও জুন— এই তিন মাসে বলতে গেলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কোনো কাজই হয়নি। বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক আরএডিপি বাস্তবায়নের উপর।

করোনাকেই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বলে অভিহিত করলেন আইএমইডি সচিব। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ আরএডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল। এর কারণ, প্রথমববারের মতো পরিকল্পনমন্ত্রী বিভাগীয় পর্যায়ে প্রকল্প পরিচালক ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছিলেন। আমি নিজেও প্রতিমাসে ডিসিদের নিয়ে দু’টি করে উন্নয়ন সভা করতাম। আইএমইডির মহাপরিচালকদের পিডিদের সঙ্গে প্রতিমাসে কমপক্ষে ছয়টি করে বৈঠক করাতাম। ফলে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যাপক গতি পেয়েছিল। এবার করোনার ধাক্কায় সেগুলো কিছু করা হয়নি। ফলে বাস্তবায়নও কমে গেছে।

মাঝ পথে এডিপি কাঁটছাট

বিজ্ঞাপন

চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার আটশ কোটি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু মাঝ পথে এসে গত মার্চ মাসে কাঁটছাট করে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬২ হাজার কোটি ও সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে এক লাখ ৬১ হাজার ৫২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ফলে অব্যয়িত রয়ে গেছে প্রায় ৩৯ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।

গত কয়েক বছরের আরএডিপি বাস্তবায়নের চিত্র

সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগে আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

আরএডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

বিজ্ঞাপন

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। দ্বিতয়ি সর্বোচ্চ শিল্প মন্ত্রণালয় ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ ও তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া আরও ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৯০ শতাংশের বেশি আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। এগুলো হলো— বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় (৯৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ), দুর্যোগ ব্যস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ‘৯৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ), কৃষি মন্ত্রণালয় (৯৩ দশমিক ৩০ শতাংশ), পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় (৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ), বিদ্যুৎ বিভাগ (৯০ দশমিক ২৮ শতাংশ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (৯০ দশমিক ০৯ শতাংশ)।

৮০ শতাংশের বেশি আরএডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো হলো— জ্বালনি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ (৮৯ দশমিক ১৫ শতাংশ), বণিজ্য মন্ত্রণালয় (৮৮ দশমিক ০১ শতাংশ), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (৮৭ দশমিক ৮০ শতাংশ), ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ (৮৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ), পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (৮৬ দশমিক ২৫ শতাংশ), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (৮৬ দশমিক ০৬ শতাংশ), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (৮৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ), তথ্য মন্ত্রণালয় (৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (৮৪ দশমিক ৯১ শতাংশ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় (৮৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ), জাতীয় সংসদ সচিবালয় (৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ) ও স্থানীয় সরকার বিভাগ (৮১ দশমিক ৫৫ শতাংশ)।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন