বিজ্ঞাপন

বিএসএমএমইউ’তে দুই দফায় চিকিৎসকদের নকল এন-৯৫ মাস্ক দেওয়ার অভিযোগ

July 21, 2020 | 9:27 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কোভিড-১৯ ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের নকল এন-৯৫ মাস্ক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আসল এন-৯৫ মাস্ক দেওয়ার পরিবর্তে লেভেলে ভুল বানানে ভরা নকল এন-৯৫ মাস্ক পরপর দুইবার সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে বিএসএমএমইউর কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক সারাবাংলাকে জানান, ২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ ইউনিটের সেবাদানকারীদের জন্য এক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। সেখানে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে এন-৯৫ মাস্কসহ অন্যান্য মানসম্পন্ন সুরক্ষা সামগ্রীও দেওয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এরপর ৪ জুলাই বিএসএমএমইউতে কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়।

চিকিৎসকরা বলেন, ‘প্রথম ব্যাচের চিকিৎসকদের দায়িত্ব শুরু করার সময় সরবরাহ দেওয়া হয় এন-৯৫, ৮২১০ সিরিজের মাস্ক। দ্বিতীয় ব্যাচের চিকিৎসকদেরও একই রকমের মাস্ক দেওয়া হলেও তা নিয়ে কিছু বলার ছিল না। কারণ এই মাস্কগুলো সাধারণত এন-৯৫ এর বিভিন্ন রকমের একটি হয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় শনিবার (১৮ জুলাই) তৃতীয় ব্যাচের চিকিৎসকদের দায়িত্ব শুরু হওয়ার পর।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসকরা বলেন, “আমাদের দায়িত্ব পালনের সময় সাতদিনের জন্য সাধারণত একসঙ্গে পাঁচটি মাস্ক দেওয়া হয়ে থাকে। এ দিন যে মাস্কগুলো দেওয়া হয় তাতে মাস্কের গায়ে লেখা দেখেই আসলে সন্দেহ হয়। সেখানে মাস্কের গায়ে লেখা ছিল, ‘This respirator helps Protecs agaInst cortein Panrticles. Misuse may result insickness ordeath. For proper use see supervisor orbox or can 3M’. এখানে চারটি ভুল ইংরেজি শব্দ ছিল যেখানে againstকে লেখা হয়েছে agalnst, certain কে লেখা হয়েছে cortein, particles কে লেখা হয়েছে Panrticles এবং call কে লেখা হয়েছে can। এছাড়াও in sickness কে লেখা হয়েছে insickness, or death কে লেখা হয়েছে ordeath এবং or box কে লেখা হয়েছে orbox।”

বিজ্ঞাপন

অথচ আমেরিকার তৈরি থ্রি-এম কোম্পানির গায়ে পরিস্কার ভাবে লট নম্বর উল্লেখ করাসহ লেখা থাকে, ‘This respirator helps protect against certain particles. Misuse may result in sickness or death. For proper use, see supervisor or box or call 3M.’ এছাড়াও এই মাস্কের যেখানে লট নম্বর লেখা ছিল সেখানে থ্রিএম কোম্পানির লট নম্বর লেখা থাকে না।

চিকিৎসকরা বলেন, ‘প্রথমবার মাস্ক পাওয়ার পরে সন্দেহ হলে এর প্রতিবাদ করা হয়। পরবর্তীতে আবার একটি মাস্ক সরবরাহ করা হয়। এসময়েও দেখা যায় যে মাস্ক দেওয়া হয়েছে সেটিও মানসম্মত ছিল না। প্রথমবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরে তারা নকল মাস্কগুলো বদলে দেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় যেটি দেওয়া হয় সেটিও দেখা যায় নকল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসএমএমইউ’র এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটের কাজ শুরুর আগে প্রচুর ঢাকঢোল করা হলেও এখানের কেনাকাটা নিয়ে আসলে তেমন কেউ জানে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেনাকাটা করার আগে কোনো রকমের আলোচনাও করেনি। কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়া কেনাকাটা করায় মান যাচাইয়ের সুযোগও তেমন ছিল না। এটা সম্পূর্ণভাবে হাসপাতাল প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি করেছেন যার সম্পর্কে অন্য কেউ জানে না। আর তাই কাদের কাছ থেকে এই মাস্ক নেওয়া হয়েছে তাও আসলে জানে না হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক। তবে সর্বশেষ শুনেছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছে। একই সঙ্গে মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তাদের বিপক্ষে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা.কনক কান্তি বড়ুয়া ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিনের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দু’জনের কেউই ফোন ধরেননি।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. এম ইকবাল আর্সলান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়ে এটা অবশ্যই খুবই উদ্বেগজনক একটি বিষয়। বিএসএমএমইউর মতো স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কী করে নকল মাস্ক এলো তা খুঁজে বের করা দরকার। কারা দিলো এমন মাস্ক ও কারা এই মাস্কের অর্ডার দিলো এগুলো নিয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের খোলাসা করা প্রয়োজন। আর সবচাইতে বড় কথা মান যাচাই করা ছাড়া কিভাবে এই মাস্ক চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছালো তা সামনে আসা প্রয়োজন। এমন নকল সুরক্ষা সামগ্রী চিকিৎসকদের জন্য আত্মঘাতী হতে পারে।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিএমএসডি মাস্ক সরবরাহ করে নাই। তারা নিজেরাই এটি চিকিৎসকদের জন্য কিনেছেন, নিজেরাই বিতরণ করেছেন। এই ক্ষেত্রে সরবরাহকারী যদি ভুল কিছু দিয়ে থাকে তবে তা মান যাচাই করা ছাড়া চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছালো কিভাবে সেটা একটা প্রশ্ন। সবচাইতে বড় কথা যাদের এই মাস্কের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল তারা মানসম্মত পণ্য দিয়েছিল কিনা তা যাচাই করার দায়িত্ব কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই। যেখানে প্রতিদিন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন সেখানে এমন গাফিলতি আসলে গ্রহণোযোগ্য নয়।’

উল্লেখ্য, দেশে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মার্চ মাসে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে সরবরাহ করা এন ৯৫ মাস্ক এবং অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বদলি করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজের পরিচালককে। এর পর এপ্রিল মাসে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে জেএমআই নামক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে সেই হাসপাতালের পরিচালককেও ওএসডি করা হয়। এ বিষয়ে একটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হলেও তার রিপোর্ট এখনো প্রকাশিত হয় নি। এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন