বিজ্ঞাপন

স্মৃতির মাদরাসা প্রাঙ্গণেই চিরঘুমে আহমদ শফী

September 19, 2020 | 4:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যে মাদরাসায় শিক্ষকতা করে জীবন পার করেছেন, স্মৃতিঘেরা সেই প্রাঙ্গণেই চিরঘুমে শায়িত হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমেদ শফী। লাখ, লাখ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন দেশের কওমি অঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত এই শতবর্ষী আলেম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় শাহ আহমদ শফীকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল জামেয়াতুল দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার অভ্যন্তরীণ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

আহমদ শফীকে নিয়ে আরও খবর-

লোকারণ্য হাটহাজারীতে আহমদ শফীর জানাজা

এর আগে, দুপুর ২টায় মাদরাসা প্রাঙ্গণেই প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জানাজা সম্পন্ন হয়। এতে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। জানাজায় শরিক হন হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

দেশের কওমি অঙ্গনে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত শতবর্ষী শাহ আহমেদ শফী গত বৃহস্পতিবার রাতে ‍গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত শফীকে তখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে শুক্রবার বিকেলে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

প্রবীণ এই আলেমকে শেষ বিদায় জানাতে শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসতে শুরু করে হাটহাজারীতে। শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে মাদরাসার আশপাশের এলাকায়। সকাল ৯টার দিকে ঢাকা থেকে শফীর মরদেহ পৌঁছায় মাদরাসায়।

বিজ্ঞাপন

ব্যাপক জনসমাগমকে কেন্দ্র করে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়ায় সাত জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এছাড়া র‌্যাব ও পুলিশের প্রায় ৫০০ সদস্য মাদরাসার আশপাশে মোতায়েন ছিল বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক।

উনিশ শতকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিরটিলা গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহ আহমদ শফী হাটহাজারীর আল জামেয়াতুল দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন। ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করেন। এরপর ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে ‘বড় মাদরাসা’ হিসেবে পরিচিত হাটহাজারীর মাদরাসাটিতেই তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। জীবনের শেষসময় পর্যন্ত তিনি এই মাদরাসায় শিক্ষকতা করেই কাটিয়েছেন।

১৯৮৬ সালে শাহ আহমদ শফী মইনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারে তার ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন কওমি অঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বেই গঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ। আমৃত্যু তিনি সংগঠনটির আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে এর বিরোধিতা করে শফীর নেতৃত্বে বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা ঢাকার মতিঝিলে শাপল চত্বর অবরোধ করেন। তখন থেকেই মূলত ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন