বিজ্ঞাপন

লোকারণ্য হাটহাজারীতে আহমদ শফীর জানাজা

September 19, 2020 | 2:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: লাখো মানুষের উপস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ‘বড় মাদরাসা’ হিসেবে পরিচিত আল জামেয়াতুল দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা প্রাঙ্গণ এবং মাদরাসা প্রাঙ্গণের বাইরে লাখো মানুষ সামিল হন এই জানাজায়। দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল এই মাদরাসা প্রাঙ্গণেই দাফন করা হবে ‘বড় হুজুর’ আহমদ শফীকে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর দুপুর ২টার দিকে আহমদ শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।  হেফাজত আমিরের বড় ছেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিরটিলা কওমি মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ জানাজায় ইমামতি করেন।

আহমদ শফীকে নিয়ে আরও খবর-

জানাজায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র‌্যাব চট্টগ্রাম জোনের পরিচালক লে. কর্নেল মশিউর রহমান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বদিউল আলমসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

জানাজা শুরুর আগে আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানি পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন। তিনি শফীর ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়ার আহ্বান জানান। এরপর বক্তব্য রাখেন সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ছিলেন বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিভাবক। শেষ জীবনে তিনি একটি বিরাট কাজ করে গেছেন। সেটা হচ্ছে, মাদরাসায় যারা পড়ালেখা করছেন, তারা কোনোদিন চিন্তা করতে পারেননি যে পড়ালেখা শেষে দেশের যেকোনো সেক্টরে তারা চাকরি করতে পারবেন। শফী সাহেব সেটা করে দিয়ে গেছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতে নসিব করেন।’

মাদরাসা এলাকা থেকে সারাবাংলা’র ফটোকরেসপন্ডেন্ট শ্যামল নন্দী জানান, জানাজার সময় মাদরাসা প্রাঙ্গণসহ প্রতিটি ভবন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। মাদরাসার বাইরেও কমপক্ষে তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল মানুষের ভিড়। মাদরাসার আশপাশের এই এলাকাগুলোর প্রতিটি ভবনের ছাদ ছিল লোকে লোকারণ্য।  এসময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াগামী বাসগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সড়কে। জানাজা শেষের পরও সড়কে ছিল শুধু মানুষ আর মানুষ। ভিড় এড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে বেগ পেতে হয়।

বিজ্ঞাপন

দেশের কওমি অঙ্গনে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত শতবর্ষী শাহ আহমেদ শফী গত বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ‍গুরুতর অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত শফীকে তখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়াটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ শফী। তার পিতা প্রয়াত বরকত আলী ও মা প্রয়াত মেহেরুন্নেছা। তিনি আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪১ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন।

শফী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে ছিলেন। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি। উর্দু ও বাংলায় তার লেখা ২২টি বই আছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের কওমি অঙ্গনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ। আমৃত্যু তিনি সংগঠনটির আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে হেফাজতে ইসলাম দৃশ্যপটে সক্রিয় হয়। তখন শফীর নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্ররা ঢাকায় গিয়ে শাপলা চত্বরে অবরোধ করেন। সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।

মৃত্যুকালে আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা কওমি মাদরাসার পরিচালক।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন