বিজ্ঞাপন

অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন নয়

October 4, 2020 | 12:08 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শিগগিরই অনুমোদন পাচ্ছে না জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় টিমের নেতৃত্বে তৃণমূলের মতামত ও অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি তথা পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবিত কমিটি সভাপতির কার্যালয়ে জমা হবে। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরেক দফা যাচাই-বাছাই শেষে জেলা ও মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের নির্দেশ দেবেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এমন সিদ্ধান্ত দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

গত ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে ও পরে ৩১টি জেলা ও মহানগরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সাংগঠনিক জেলাগুলোতে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তা কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর সভাপতিমণ্ডলীর সভায় এ সময় আরেক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। তবে এখন পর্যন্তও কয়েকটি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা ‘এমপি লীগ’ বলয়ে প্রভাবিত হয়ে ‘মাইম্যান’ নেতাদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করতে প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে অনুমোদনের জমা দেন। এতে বাদ পড়া নেতা ও তাদের অনুসারীরাও কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রতিটি কমিটির বিপরীতে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে তৃণমূলের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের নেতারা যাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পায়, সে বিষয়ে শনিবারের বৈঠকে চূড়ান্ত দিক-নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। তবে বৈঠকে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের করোনাকালীন ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করলেও তাদের জমা পড়া প্রস্তাবিত কমিটিগুলোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত জানাননি দলীয় প্রধান।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় স্ব স্ব বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ছয়জন এবং দুজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কোন জেলা কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে, কারা কারা কাদের ‘মাইম্যানদের’ জায়গা দিয়ে ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের কোণঠাসা করতে কমিটি থেকে বাদ দিয়েছে- এসব বিষয় উপস্থাপন করেন নেতারা। তার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তব্যের ফ্লোর উন্মুক্ত করে দিয়ে বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কে কোথাও কি সমস্যা ফেইস করছো, সেটা অবহিত করবে। আমি চাই, তৃণমূলের কমিটিতে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের টানতে হবে। তোমরা কাজ করতে গিয়ে, কমিটি করতে গিয়ে, কোথায় কি সমস্যা হচ্ছে- তা জানাবে। আমাদের সেক্রেটারি আছে তাকে অবহিত করবে।’

বৈঠকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ড. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, মেরিনা জাহান কবিতাসহ আরও দুয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে প্রেস বিফ্রিং করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল বলেন, ‘সভায় বেশকিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে সকলকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে নিজেদের লোক দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির জন্য মাইম্যান কমিটি গঠন করা যাবে না। কাউন্সিলে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী হয়ে ছিলেন তাদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন ও পরীক্ষিত নেতাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা ক্ষোভের কারণে বাদ দেওয়া যাবে না। কোনো অবস্থাতেই পার্টির ভিতরে বিতর্কিত লোকজনদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তৃণমূলের সব কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠন করতে হবে। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে শুরু উপজেলা পর্যায় শেষ করে জেলা ও মহানগর শাখা সম্মেলন শেষ করতে হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে মাঠের লোক নেতা হয়। আর সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠন করলে লবিং বা তদবিরে কিছু লোক নেতা হয় ‘

বিজ্ঞাপন

জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় টিমের নেতারা তৃণমূলের মতামত ও অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করবে এবং প্রস্তাবিত কমিটি সম্পর্কিত প্রতিবেদন ও প্রস্তাবনা সভাপতির কার্যালয়ে পেশ করবে। এর পর সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি অনুমোদন করা হবে বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী শীতে করোনা মহামারি শক্তিশালী আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা মোকাবিলায় দলীয় প্রধান জননেত্রী সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনকল্যাণে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার সূচনা বক্তব্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতে দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৫২২জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। এত বড় স্যাক্রিফাইস বোধ হয় আর কোনো দল করেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পার্টির কাজগুলো মোটামুটি কিছু কিছু জায়গায় সচল রয়েছে। আমি মনে করি, কিছু সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় হয়তো সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আমরা আর কমিটি করতে পারিনি, কারও খোঁজও নিতে পারিনি, যেতেও পারেনি। আস্তে আস্তে আমরা সেই কাজগুলো করতে পারব। সাংগঠনিক শক্তিটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগের যে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি আছে, এই করোনা মোকাবিলায়য় সেটা প্রমাণিত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল অব. মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান ও কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সারবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন