বিজ্ঞাপন

হালদা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার অনুরোধ

October 21, 2020 | 6:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র রক্ষায় হালদা নদীতে দুর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পূজা উদযাপনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসুরক্ষাসহ ১০টি বিশেষ নির্দেশনাও দিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকালে নগরীর মোমিন রোডের মৈত্রী ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানানো হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত।

১০ দফা নির্দেশনার মধ্যে আছে— পূজা মণ্ডপ খোলামেলা রাখা যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে; সাউন্ড সিস্টেমের পরিবর্তে মাইকের ব্যবহার; স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে প্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ-শোভাযাত্রা পরিহার; মণ্ডপের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা; শারীরিক দূরত্ব মেনে মণ্ডপে প্রবেশ করান ‘নো মাস্ক-নো এন্ট্রি, অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া কাউকে মণ্ডপে প্রবেশ করতে না দেওয়া; গেটে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা; সামাজিক দূরত্ব মেনে অথবা ভার্চুয়ালি পুষ্পাঞ্জলি প্রদান; আতশবাজি ও পটকা পরিহার; এবং সূর্যাস্তের মধ্যেই যথাসম্ভব মণ্ডপের কাছাকাছি জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে শ্যামল কুমার পালিত বলেন, চট্টগ্রামের হালদা নদী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। হালদা নদীর সুরক্ষার জন্য সেখানে কোনো ধরনের প্রতি বিসর্জন না দেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে এসে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিলিত হওয়া হালদা নদীর দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৪ মিটার। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখানে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবছর এপ্রিলের শেষ অথবা মে মাসে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার তিথিতে ভারী বজ্রসহ বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নামলে এবং নদীর তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা অনুকূলে থাকলে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সেই ডিম সংগ্রহ করে রেণু ফুটিয়ে পোনা উৎপাদন করেন। ডিম সংগ্রহ নিয়ে প্রতিবছর হালদা পাড়ে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।

তবে শিল্প-কারখানার বর্জ্য, বালু উত্তোলনকারী ও চোরা শিকারিদের উৎপাতে দখল-দূষণে হালদা নদীর বিপন্ন দশার খবর বারবার আসে গণমাধ্যমে। এ অবস্থায় হালদা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার আহ্বান প্রতীকী হলেও এর গুরুত্ব অনেক বলে মনে করছেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া।

বিজ্ঞাপন

মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘হালদা নদীজুড়ে বৃহৎ আকারে প্রতিমা বিসর্জন হয় না। তবে হালদা ও কর্ণফুলী নদী যে মোহনায় মিলিত হয়েছে, সেখানে হয়। বিচ্ছিন্নভাবে হালদা নদীতেও হয়। প্রতিমার সঙ্গে লাগানো গাছের কাঠামোগুলো নদীর তীরে-তলদেশে আটকে থাকে, পলি জমে। বৃহৎ আকারে যদি হতো, তাতে মা-মাছের বিচরণে প্রভাব পড়ত। পূজা উদযাপন পরিষদ হালদার গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে একটা আহ্বান জানিয়েছে। আমি মনে করি, প্রথমবার এবং প্রতীকী আহ্বান হলেও এর গুরুত্ব অনেক। এভাবে যদি সবাই যার যার অবস্থান থেকে হালদা রক্ষায় এগিয়ে আসেন, তাহলে এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এবার পূজামণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ-আনসার মোতায়েন না করার সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গও ওঠে। এক প্রশ্নের জবাবে শ্যামল কুমার পালিত বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। উনারা বলেছেন, স্থায়ীভাবে মণ্ডপে অবস্থান না করে উনারা মোবাইল টিমে ভাগ হয়ে থাকবেন। মণ্ডপের আশপাশেই উনারা অবস্থান করবেন। প্রত্যেক মণ্ডপে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নম্বর দেওয়া থাকবে। কোনো সমস্যা হলে যদি ফোন করে জানানো হয় অথবা পুলিশের হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এ জানানো হয়, উনারা দ্রুত মণ্ডপে যাবেন।  এবার যেহেতু করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা হবে, আশা করছি লোকসমাগম কম হবে এবং কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এবার চট্টগ্রাম জেলার আওতায় ১৫ উপজেলায় সার্বজনীনভাবে ১৫২৪টি ও পারিবারিকভাবে ৩৮৯টিসহ মোট এক হাজার ৯১৩ মণ্ডপে দুর্গা পূজা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ভট্টাচার্য, চন্দন দাশ ও অসীম দেব উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন