বিজ্ঞাপন

উৎপাদনের অপেক্ষায় ২ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র, আরও কয়েকটির কাজ শেষদিকে

November 3, 2020 | 12:03 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। যদিও যথাসময়ে সে লক্ষ্যে সরকার পৌঁছাতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই কয়েকটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। এছাড়া নির্মিত হচ্ছে একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি বিদুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। এরমধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা সাড়ে ৭.৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং পাবনার সুজানগরে পদ্মার চরে ৬৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জের যমুনার তীরে সাড়ে সাত মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)। জানা গেছে এরই মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ। এখন উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।

মালয়েশিয়াভিত্তিক ডিট্রোলিক সোলারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান আইএফডিসি সোলার নির্মিত ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিরও কাজ শেষের পথে।

বিজ্ঞাপন

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি এনারগন টেকনোলজিস ও চায়না সানেরিজ কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে নির্মাণ করা বাগেরহাটের মোংলার ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২১ সালে উৎপাদনে আসার কথা।

অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি মেতিতো ইউটিলিটিস, চীনের জিনকো পাওয়ার টেকনোলজি এবং সৌদি আরবের আল জোমাইয়া এনার্জি অ্যান্ড ওয়াটার কোম্পানি নির্মিত ফেনীর সোনাগাজীতে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও ২০২১ সালে উৎপাদনে আসার কথা।

এছাড়া নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন ও চীনের কোম্পানি সিএমসির যৌথ উদ্যোগে সিরাজগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট এবং পাবনার সুজানগরের রামকান্তপুরে পদ্মার চরে ৬৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের পর থেকে সরকার ৪০টির বেশি নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলো। কিন্তু নানা জটিলতায় সময়মত কাজ শুরু করতে না পারায় ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের অনুমতি বাতিল করা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩টি নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের কাজ চলছে। উৎপাদন শুরু হলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

জানা যায়, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকার বেশ কিছু বেসরকারি কোম্পানিকে অনুমতি দিয়েছিলো। কিন্তু জমি সংক্রান্ত জটিলতায় তারা যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই সরকার নিজেই বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

সে পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট ও চীনের প্রতিষ্ঠান সিএমসি যৌথভাবে পটুয়াখালীর পায়রায় ২০০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ও সমীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এনডব্লিউপিজিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম জানান, ‘বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ পুরোদমে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাতাসের গতিবেগ দরকার প্রতি সেকেন্ডে আড়াই মিটার। পায়রায় তা চার মিটারের বেশি রয়েছে। যে কারণে এই স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন এই পর্যায়ে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থাকার কথা। কিন্তু সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৬৩ মেগাওয়াট। এরমধ্যে রাউজানে ২৫ মেগাওয়াট, টেকনাফ থেকে ২০ মেগাওয়াট, পঞ্চগড় থেকে ৮ মেগাওয়াট, কাপ্তাই থেকে ৭ মেগাওয়াট এবং সরিষাবাড়ি থেকে মাত্র ৩ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) হিসাবে দেশে বর্তমানর ৫৮ লাখ সৌর বিদ্যুৎ বা সোলার হোম সিস্টেম রয়েছে। এ থেকে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে।

উল্লেখ্য, পরিবেশরদূষণের ঝুঁকি কমাতে সরকার সৌর এবং বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পর্যায়ের বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচও কম।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন