বিজ্ঞাপন

হঠাৎ কী হলো বিএনপিতে?

December 18, 2020 | 1:30 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: টানা ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দলীয় ঐক্যে ফাটল ধরেনি বিএনপির। আর এ বিষয়টিকেই সবচেয় বড় অর্জন হিসেবে দেখছিল দলটির হাইকমান্ড। পদ-পদবী নিয়ে মাঝে-মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিলেও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি কেউ। কয়েকটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ছাড়া দল ছেড়ে যাননি গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা।

বিজ্ঞাপন

তবে অতিসম্প্রতি সিনিয়র কয়েকজন নেতার কর্মকাণ্ডে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিএনপিতে। সংশয় তৈরি হয়েছে দলের অখণ্ডতা নিয়ে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ।

দলীয় সূত্রমতে, দলের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে পল্টন মোড়ে হঠাৎ বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ব্যস্ততম সড়কে নেতাকর্মীর অবস্থান এবং সরকারবিরোধী স্লোগানের মধ্যে সেখানে হাজির হন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং শওকত মাহমুদ। এর পর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, হাইকমান্ডকে না জানিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। আর সে কারণেই সোমবার রাতেই দলীয় প্যাডে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয় মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং শওকত মাহমুদকে। শোকজন নোটিশে সই করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এদিকে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান থাকা অবস্থায় দলের দুই সিনিয়র দুই নেতাকে রিজভীর শোকজ বিএনপিতে নতুন প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে— বিএনপি আসলে চালাচ্ছে কে? কোন জায়গা থেকে পরিচালিত হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি?

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী ফোন রিসিভ করননি।

বিজ্ঞাপন

আর শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সারাবংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি ফোনে কোনো কমেন্ট দেবো না। আমরা বক্তব্য আগামী শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) মিডিয়ার সামনে তুলে ধরব।’

দলীয় সূত্রমতে, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদের এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বা কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে দেখছে না বিএনপির হাইকমান্ড। কারণ, গত অক্টোবর মাসে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর সরাসরি বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তাদের এই বক্তব্যে বিএনপিতে তোলপাড় দেখা দেয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে তাদের বক্তব্য ক্ষুব্ধ হন বিএনপির বেশিরভাগ নেতা। দাবি ওঠে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার।

ওই তিনি নেতারা দেওয়া বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল— ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিনি আপস করেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। দুর্বল নেতৃত্বের কারণেই আপস করতে হয়েছে তাকে। তারেক রহমানকে খালেদা জিয়ার উত্তরসূরী মনোনীত করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। খালেদা জিয়া নেতৃত্বে না থাকলে বিএনপির রাজনীতি পথ হারাবে।’

ওই সময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছিলেন ‘খালেদা জিয়া কিসের আপসহীন? আপস না করলে উনি জেল থেকে বেরুলেন ক্যামনে? সরকারের কথা শুনেই তো বেরিয়ে এসেছেন। বেগম জিয়া তিন বার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন তার একটিই কারণ, তিনি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী। তার নিজের কোনো যোগ্যতা নেই। আর যোগ্যতা আসবে কোথা থেকে? যোগ্যতার জন্য তো লেখাপড়া করতে হয়!’

বিজ্ঞাপন

একই টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে আপস করে ফেলেছি। এ কারণে বেগম জিয়া জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু জনমনে তার যে স্থায়ী আসন তার কোনো রিপ্লেসমেন্ট নেই। খালেদা জিয়াই বিএনপির বর্তমান ও ভবিষ্যতের একমাত্র নেতা। তারপর কে, জানি না।’

ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘তারেক রহমান কতটুকু দল চালাতে পারবেন, আপনারাও দেখেন আমিও দেখি। লন্ডনে বসে কথাবার্তা-ভাব আদান প্রদান করা কঠিন। তিনি খোমিনি নন।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য মনোনীত ব্যক্তি হচ্ছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে জিজ্ঞাসা করুন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরা নতুন খেলোয়াড় না। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও এরা দলের বিরুদ্ধে, নেত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এখনো বলছেন। তারপরও আমাদের চৈতন্য ফিরবে না।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন