বিজ্ঞাপন

পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার ৫৬ দেশের নারী: গবেষণা

December 23, 2020 | 5:25 pm

রোকেয়া সরণি ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে নারীদের পোশাকের ওপর ধর্মীয় বিধিনিষেধ চাপানোর নানা নজির থাকলেও সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ উভয় পোশাকের জন্যই হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী। অনেক জায়গায় নারীর পোশাক নির্ধারণে সরকারি হস্তক্ষেপও চোখে পড়ে। আমেরিকান প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে গত কয়েক বছরে পোশাকের জন্য নারীর প্রতি হয়রানি বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের ১৯৮ দেশের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে মোট ৫৬ দেশের নারীরা ব্যক্তির মাধ্যমে বা সামাজিকভাবে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। এসব দেশে কঠোর ধর্মীয় পোশাকের জন্য যেমন তেমনি অন্যান্য পোশাকের জন্যও তারা সহিংস আচরণের শিকার হয়েছেন। এদিকে, ৬১ দেশের নারীদের পোশাকের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ, বিশেষ করে তাদের মাথা ঢেকে রাখার নির্দেশনাও রয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এসব দেশের অন্তত একটি অংশে ধর্মীয় পরিচয়ে নারীদের মৌখিক নির্যাতন থেকে শুরু করে শারীরিক নির্যাতন বা হত্যাসহ নানা ধরনের সামাজিক হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক প্রতিকূলতা
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ টির মধ্যে ৪২ টি দেশে হিজাব বা অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য নারীরা সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর ১৯ দেশে নারীরা ধর্মীয় পোশাক না পরার জন্য নির্যাতন সহ্য করেছেন। ৫ টি দেশ-জার্মান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় নারীরা এই দুধরনের অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ৫টি অঞ্চলের ৪টিতে, নারীরা কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে পোশাক পরার জন্য সামাজিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় আবার ধর্মীয় পোশাক না পরার জন্য নারীরা হয়রানির মুখে পড়েছেন।

পোশাকের এ বিধিনিষেধ মেনে না চলার জন্য সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নারীরা। সেখানে ২০ টি দেশের অর্থাৎ ৪৪ শতাংশ এলাকায় নারীরা এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে, মুসলিম নারীরা হিজাব পরার জন্য বৈষম্য, শারীরিক নির্যাতন ও অশালীন আচরণের শিকার হয়েছেন। যেমন ২০১৮ সালে ডেনমার্কে হিজাব পরা মুসলিম নারীকে পার্কিং স্পেস ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এক চালক। জার্মানীতে এক নারী আরেক মুসলিম নারীকে আঘাত করেছিলেন এবং তার হিজাব খুলে নিতে চেষ্টা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এজাতীয় ঘটনার জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলে ৫০ জাতির মধ্যে ১৪ টিতেই নারীরা পোশাক নীতি ভঙ্গের জন্য হয়রানির শিকার হয়েছেন, যা প্রায় ২৮ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে ১০ টি দেশে নারীরা অনেক বেশি মাত্রার ধর্মীয় পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার হয়েছেন, যেখানে ৬ টি দেশে ধর্মীয় পোশাক না পরার জন্য হয়রানির অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২ দেশ-ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় আবার এই দুই ধরনের পোশাকের জন্যই হয়রানির শিকার হয়েছেন নারীরা।

২০১৮ সালে মালয়েশিয়াতে হিজাব না পরায় এক নারীকে আক্রমণ করার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এবং ২০১৬ সালে কিরগিজিস্তানে ‘হে দুর্ভাগা দেশ, কোথায় যাচ্ছি আমরা (Oh, poor nation, where are we headed?)’ শিরোনামে একটি বিলবোর্ড প্রকাশ পায়। সেখানে ইসলামিক পোশাকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে নারীদের ছবি প্রদর্শন করা হয়। যার মাধ্যমে ধর্মীয় পোশাক নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিলবোর্ডের সেই প্রদর্শনীটিকে সেদেশে বিদেশি ও অতিমাত্রার ধর্মীয় পোশাক ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমন কথা লেখার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

সাব-সাহারান আফ্রিকার ৭ টি দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ছয়টি দেশে পোশাক নীতি লঙ্ঘনের জন্য নারীরা সামাজিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। সাব-সাহারান আফ্রিকার ৪ টি দেশে ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক না পরা এবং ৩ টি দেশে ধর্মীয় পোশাক না পরার জন্য হয়রানির শিকার হয়েছেন নারীরা। যেমন, কেনিয়ায় ২০১৮ সালে এক শিক্ষক ইউনিয়ন রিপোর্ট করেছিলো যে, নারী শিক্ষকদের হিজাব পরা উচিত, যেখানে লাইবেরিয়ায় মুসলিম নারীরা হিজাব পরার জন্য কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন।

আমেরিকায় যেসব নারীরা ধর্মীয় পোশাক পরেন তারা প্রায় সব ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। উদাহরনস্বরূপ, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে একটি হিন্দু স্কুলে একজন মুসলিম শিক্ষককে বলা হয়েছিলো তার হিজাব খুলে ফেলতে অথবা স্কুল ত্যাগ করতে। ২০১৬ সালে কানাডার অন্টারিও’র এক সুপারমার্কেটে এক নারী, একজন মুসলিম ক্রেতাকে থুতু মেরেছিলেন এবং তার হিজাবসহ চুল ধরে টান দেন।

বিজ্ঞাপন

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ২০ টির মধ্যে ৮ টি দেশে ধর্মনিরপেক্ষ পোশাকের জন্য নারীদের হয়রানি হতে দেখা গেছে। সেখানে আবার দুই দেশে ধর্মীয় পোশাক পরার জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলে ২০১৮ সালে একদল ইহুদি পুরুষ, অশোভন পোশাক পরার জন্য একটি মেয়েকে তাড়া করে এবং তাকে ভর্তসনা করে। কাতারে, একজন মুসলিম নারী হিজাব না পরে একটি নিউজ প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা
সারাবিশ্বে ধর্মীয় বিধিনিষেধের আরেক রূপ হলো পোশাক বা পরিধেয়ের ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা সরকারি বিধি; যেমন নারীদের জন্য হিজাব ও পুরুষদের জন্য দাঁড়ি। ২০১৮ সালের গবেষণা অনুযায়ী, এসব বিধিনিষেধ আছে এমন বেশিরভাগ দেশেই নারীদের জন্য হিজাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি অঞ্চলেই নারীদের মাথার পোশাকের বিষয়ে কোনো না কোনো নীতি রয়েছে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই, (৪৫ টির মধ্যে ২১ টি দেশে) নারীদের মাথা ঢেকে রাখার বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এতে করে স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিকাব ও বোরকা পরা থেকে বিরত ছিল। দেশটি পুলিশের পোশাকে স্কার্ফ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীকের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় পোশাক স্কার্ফের অনুমতি দিয়েছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৬ টি, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ৯ টি, সাব-সাহারা আফ্রিকার ৯ টি ও আমেরিকার ৬ টি দেশে নারীদের স্কার্ফ পরা না পরার বিষয়টি সরকার নিয়ন্ত্রিত। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ায় এক বিচারক সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে একজনের বিচার চলাকালীন আদালতে দর্শকের গ্যালারিতে তার স্ত্রীকে নিকাব পরতে দেননি। এদিকে তুরস্কের উরফা শহরের একটি স্কুলের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছিলেন, নারী শিক্ষার্থীরা মাথায় স্কার্ফ না পরায় তাদেরকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিলো।

কয়েকটি দেশে, নারীদের ধর্মীয় পোশাকের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দিষ্ট কিছু নীতি রয়েছে। যেমন ইরানে সব নারীদের জনসম্মুখে ‘ইসলামিক পোশাক’ অর্থাৎ মাথা ও পুরো শরীর ঢিলেঢালা পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।

সারাবাংলা/এসএসএস/আরএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন