বিজ্ঞাপন

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে হচ্ছে আরও ২ মামলা

January 9, 2021 | 12:25 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হচ্ছে। উচ্চ আদালতে দায়িত্বে থাকার সময় অবৈধপথে অর্থ উপার্জন ও জাল জালিয়াতির অভিযোগে মামলাগুলো হতে পারে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানিয়েছে, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে আসা কিছু কিছু অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। দুদকের হাতে এসেছে কিছু দালিলিক প্রমাণও। সবকিছু বিবেচনা করে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে এসকে সিনহা হুন্ডিসহ অর্থপাচার করেছেন। এর মধ্যে সেই টাকা দিয়ে আমেরিকার নিউ জার্সিতে ২০১৮ সালে বাড়িও কিনেছেন। এ ছাড়া আমেরিকায় থাকেন সিনহার ভাই। যার ফলে বিভিন্ন সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাতেও আমরা প্লট পেয়েছি। আর এই প্লটটি তার ভাইয়ের নামে রাজউক থেকে অনুমোদন করা।’

অভিযোগের সত্যতা আসায় আমরা এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো—বলেন দুদক কমিশনার।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৫ সালে শপথ নেন এসকে সিনহা। এরপর ২০১৭ সালে ছুটি নিয়ে তিনি বিদেশে যান। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ আসায় আপিল কাজে সে সময় তার সঙ্গে বিচারপতিরা কাজ করতে অসম্মতি জানান। এমন অবস্থায় বিদেশে থেকেই পদত্যাগ করেন এসকে সিনহা।

তবে আলোচনা ও সমালোচনা যেন পিছুই ছাড়ছে না সাবেক এই প্রধান বিচারপতির।  এর আগে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে চার কোটি টাকা স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করার অভিযোগ একটি মামলা করে দুদক। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দু’টি অ্যাকাউন্ট খুলে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

বিজ্ঞাপন

ঋণের জামানত হিসাবে আসামি রণজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় আবেদনে। ওই দম্পতি এসকে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দু’টি অনুমোদন করেন।

ওই বছরের ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দু’টি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এসকে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এসকে সিনহার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে এসকে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দু’টি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে এরই মধ্যে দুদকের হাতে তথ্য এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছিলেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। সেই টাকায় আমেরিকায় বাড়ি কিনেছেন তিনি।

এ ছাড়া রাজধানীর উত্তরায় পাওয়া গিয়েছে দৃষ্টিনন্দন বহুতলা ভবন। তবে এটি বৈধ টাকায় করা কিনা তা নিয়েও দুদকের প্রশ্ন রয়েছে। আর এরই মধ্যে দুটি বিষয়ে অনুসন্ধান শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

অপরদিকে দুদকের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করায় বিদেশ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে আনার পরিকল্পনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

অর্থপাচার বিষয়ে কিছু প্রমাণ মিলেছে। কেননা এসকে সিনহার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন জমা হয় প্রায় ২ লাখ ডলার।  আর ২০১৮ সালের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে জমা হয় প্রায় ৬০ হাজার ডলার। আর এ সব টাকা আসে ইন্দোনেশিয়া ও কানাডা থেকে। দুদক মনে করছে এই অর্থ সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা হুন্ডির মাধ্যমে তার ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে পাঠান।

আরও পড়ুন
এসকে সিনহার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
এসকে সিনহার দুর্নীতির মামলা বদলির নির্দেশ
এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলায় দুদকের অনুমোদন
ফারমার্স ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা

সারাবাংলা/এসজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন