বিজ্ঞাপন

ফের মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর ঝুঁকি কম থাকলেও রয়েছে অন্য রোগের শঙ্কা

January 24, 2021 | 10:09 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর আক্রমণে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ২০১৯ সালে। সেবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এ ঘটনায় চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। ফলে সংস্থাগুলো ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরের বছরটিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকাও পালন করে। কিন্তু চলতি বছর ফের মশার লাগামহীন উপদ্রব বেড়েছে। তবে এবার এডিসের প্রবণতা না থাকলেও বেড়েছে কিউলেক্সসহ অন্যান্য মশা। আর এসব মশার আক্রমণে ডেঙ্গু রোগের আশঙ্কা না থাকলেও ঝুঁকি বাড়ছে ফাইলেরিয়াসিস, চিকনগুনিয়াসহ অন্যান্য রোগের।
যদিও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে তারা কার্যকরী ওষুধ প্রয়োগসহ নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাই শিগগিরই মশার উৎপাতের লাগাম টেনে ধরতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ওষুধ ছিটালেও মশা মরে না। তাই কার্যকর ওষুধ প্রয়োগ জরুরি বলেও মত দিয়েছেন নগরবাসী।
গত ১৭ জানুয়ারি ‘ওষুধ ছিটালেও মরে না মশা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে সারাবাংলা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মশা বিড়ম্বনার নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে। সেসময় বাসিন্দারা এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ আকারে বলেছিলেন, সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত ওষুধ ছিটাতে দেখছেন তারা। কিন্তু সে তুলনায় মশা কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাদের ধারণা, এসব ওষুধ মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে না।’
সংবাদটি প্রকাশের একদিন পর ১৮ জানুয়ারি মশার ওষুধের কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে মেয়র বরাবর চিঠি লিখেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. ইবরাহীম। সংস্থার মেয়রের কাছে লিখিত ওই অভিযোগে তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড একটি জনবহুল এলাকা। ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃক বরাদ্দকৃত মশার ওষুধ যথা নিয়মে প্রতিদিন এলাকায় মশককর্মীদের মাধ্যমে ছিটানো হচ্ছে। মশার ওষুধ এর কার্যকারিতা প্রসঙ্গে এলাকাবাসীর মন্তব্য হচ্ছে- মেয়র মহোদয় প্রথমে যে মশার ওষুধ দিয়েছিলেন তার কার্যকারিতা এরকম ছিল যে ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের জনগণ মশারি ছাড়া রাতযাপন করেছিলেন। বর্তমানে মশার ওষুধের সেরকম কোনো কার্যকারিতা আমরা পাচ্ছি না।’ এ জন্য মশার ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এমন অভিযোগ শুধু কাউন্সিলর ইবরাহীমের নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির আরও দুজন কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল-বিকাল মশা নিধনে কর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছি না। উল্টো জনগণ ওষুধ ছিটাতে যাওয়া কর্মীদের নিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে করে কথা বলে। বাসিন্দারা বলে- ওষুধের মধ্যেই মশা ডিম পারে। ওষুধ ছিটায়ে লাভ নেই। চরম বিপাকে আছি আমরা। কিন্তু কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না, সমস্যা ওষুধে নাকি মশায়।’
শুধু বাসিন্দা কিংবা কাউন্সিলররা নন, মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এমনকি মশার লাগামহীন উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগে তিনি দুই সিটিকে তাগিদও দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সচিবালয় থেকে অনলাইনে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ৮ম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে মেয়রদের এ তাগিদ দেন।
ওই সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর ওষুধ, জনবল ও যন্ত্রপাতিসহ সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সকলের সমন্বিত, কঠোর উদ্যোগের ফলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এখন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব না থাকলেও অন্যান্য প্রজাতির মশা বেড়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই রাজধানীবাসীসহ দেশের মানুষকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।‘ একই ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মশা সেটাতে সহনশীল হয়ে যায় উল্লেখ করে মন্ত্রী তাজুল কার্যকর ওষুধ ক্রয়ের পাশাপাশি তদারকি বাড়ানোরও তাগিদ দেন মেয়রদের।
মন্ত্রী জানান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, জাপানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মশা আছে। ওইসব দেশ যেভাবে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করে মশার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এনেছে আমরা সেভাবে কাজ করছি এবং অনেকটাই সফল হয়েছি। দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে করা সকল ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনলাইন সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে মশার ওষুধের কার্যকরিতা প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বলছে, তাদের ওষুধ যথেষ্ট কার্যকর। আর কিছুদিন অপেক্ষা করলেই মশার লাগামহীন উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরবাসীর অভিযোগকে আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমরা যে হাত গুটিয়ে বসে আছি তাও কিন্তু নয়। নগরবাসী হয়তো লক্ষ্য করছে, আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের কারণে কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। ঠিক আমরা এবারও সফল হব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড কীটনাশক ওষুধ রয়েছে সেটির প্রয়োগও অব্যাহত রয়েছে। এই ওষুধটি যথেষ্ট কার্যকরী। পাশাপাশি সম্প্রতি ওয়াসা কাছ থেকে যেসব খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমরা পেয়েছি সেগুলো যদি সচল করা যায় তখন মশার এমন উপদ্রব থাকবে না।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা থেকে মশার ওষুধের কার্যকর ফল না পাওয়ার বিষয়ে অবগত রয়েছেন মেয়র মহোদয়। মশার ওষুধের কার্যকর ফল মিলছে কিনা সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ওষুধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেটিও জানাতে বলেছেন তিনি। আশা করছি খুব শিগগিরই সমাধান মিলবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন