বিজ্ঞাপন

পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে না পেরে দরপত্রই বাতিল!

January 28, 2021 | 10:22 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের কাজ করছে সরকার। সেই লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। সেই দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের মূল্যায়ন কমিটিতে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায়ের নির্দেশে কারিগরি কমিটিতে তিন দফায় নম্বর বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আবারও মূল্যায়ন করলেও কাজ পায়নি ওই প্রতিষ্ঠান। পরে এক ‘উড়ো চিঠি’র ভিত্তিতে প্রথম হওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খসড়া চুক্তির পরও বাতিল করা হয়েছে কার্যাদেশ।

বিজ্ঞাপন

যে পাঁচটি কোম্পানির নামে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তাদের কেউই ওই চিঠির সঙ্গে যুক্ত নন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছে। আর কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে না পেরেই নজিরবিহীনভাবে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। কাজ পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে মন্ত্রণালয়ের কাছে এরই মধ্যে আবেদন করেছে।

নথিপত্র বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে অটোমেশন ও ডিজিটাল কার্যক্রমের জন্য দরপত্র আহ্বান করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দরপত্র খোলার পর ২০২০ সালের মার্চে সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলো হলো— ডেভনেট ও জানালা বাংলাদেশ, রিভ সিস্টেম, লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ান, টেনকো ভিসতা, সিনটেক সলিউশন এবং বিজনেস অটোমেশন লি.। পরে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব নিয়ে গত বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে যাচাই-বছাই শুরু হয়।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূল্যায়ন কমিটির প্রথম পর্যালোচনায় সর্বোচ্চ নম্বর (৮৮ দশমিক ২৫) পায় যৌথভাবে দরপত্রে অংশ নেওয়া লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ান। ৮৫ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রিভ সিস্টেম। কিন্তু রিভ সিস্টেমকে কাজ পাইয়ে দিতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায় কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রিভকে সর্বোচ্চ নম্বর দিতে মন্ত্রণালয়ের আইসিটি শাখার সহকারী পোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশকে মৌখিক নির্দেশ দেন রমা রানী। প্রথম দফায় ৩ নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয় রিভের। এতে ড্রিম সেভেনটি ওয়ান ও রিভের নম্বর সমান হয়। তাতেও রিভ কাজ পাবে না জেনে দ্বিতীয় দফায় রিভের নম্বর দশমিক ২৫ বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ হচ্ছে না দেখে আরও ২ দশমিক ৭৫ নম্বর বাড়ানো হয়। তিন দফায় রিভের পক্ষে মোট ৬ নম্বর বাড়ানো হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে একটি পক্ষ মৌখিকভাবে সচিবের কাছে অভিযোগ জানায়। মূল্যায়নটি নিরপেক্ষ করতে তিনি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. রেজাউল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই করে ১১টি যায়গায় রিভকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ মেলে। মূল্যায়ন কমিটির একজন সদস্য তাদের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে জানান, নম্বর বাড়িয়ে দিতে রমা রানী তাকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা হলে কারিগরি দিক থেকে লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ানই এগিয়ে থাকে। আর রিভ সিস্টেম দ্বিতীয় হয়। পরে আর্থিক ও কারিগরি মূল্যায়নে লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ান প্রথম হয়। দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে বিজনেস অটোমেশন, রিভের অবস্থান হয় তৃতীয়।

পরে লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ানের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নোগেসিয়েশন মিটিং ও খসড়া চুক্তি সই হয়, যা মন্ত্রণালয়ের সচিব সফিকুল আহম্মদ অনুমোদন করেন। কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য সচিব সেই চিঠি রমা রানীকে পাঠান। কিন্তু রমার নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগ অহেতুক কালক্ষেপণ শুরু করে। এর মধ্যে দরপত্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে— এমন বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে একটি বেনামি চিঠি আসে। অভিযোগ ওঠে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেনামি চিঠি গ্রহণ করার নিয়ম না থাকলেও রমার ইশারায় সেই চিঠি গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। সচিবের কাছে তা নিয়ে যান রমা রানী রায়। তবে সচিব তা আমলে না নিয়ে রেখে দেন।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে সচিব গত বছরের শেষ সপ্তাহে বান্দরবনে অবস্থান করলে রমা সচিবের চলতি দায়িত্ব পান। সচিব যে চিঠি আমলে নেননি, রমা সচিবের চলতি দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই চিঠি মন্ত্রীর কাছে পাঠান। অনিয়মের ঘটনা জেনে মন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। পরে গেল ১৮ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে মন্ত্রণালয় এই দরপত্রের সব প্রস্তাব বাতিল করে।

জানা গেছে, দরপত্র মূল্যায়নের উপকমিটিতে ছিলেন উপসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান, আইসিটি শাখার সহকারী পোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশ ও এটুআইয়ের ঈউনুস আলী সরদার। রিভ সিস্টেমকে এগিয়ে রাখতে আইসিটি শাখার সহকারী পোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশকে চাপ দিয়েছিলেন রমা রানী। আর কাজী মোখলেসুর রহমানও রমার প্রতি অনুগত।

অনৈতিকভাবে রিভ সিস্টেমকে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উপসচিব কাজী মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে আইসিটি শাখার সহকারী পোগ্রামার ওয়াহিদ পলাশের কথোপকথনও হয়। তার একটি অডিও রেকর্ড সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে। ওই কথপোকথনে পলাশ জানতে চান, নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ায় কোনো বিপদ হতে পারে কি না। এর জবাবে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘…আমরা বাড়াইওনি, কমাইওনি। আমরা আমাদের মতো মার্ক দিয়েছি। নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার তো কোনো প্রমাণ নেই। আমরা কত নম্বর দিয়েছি, কেউ তো জানে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনৈতিকভাবে কোনো নম্বর বাড়ানো হয়নি। আর ফোনে কার সঙ্গে কী কথা বলেছি, তার ওপর তো নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার বিয়ষটি নির্ভর করে না।’

বিজ্ঞাপন

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাই তদবির করে। আমিও বলেছি (রিভের পক্ষে)। বলেছি নিয়মের মধ্য থেকে যদি কিছু করা যায়। কিন্তু আমি বলার পরও তো রিভকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সফিকুল আহম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দরপত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি বা অভিযোগ ওঠায় তা বাতিল করা হয়েছে। যে কোম্পানি প্রথম হয়েছিল, তারা পুনঃদরপত্রেও অংশ নিতে পারবে।’ অনিয়মের অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দেন তিনি।

উড়ো চিঠি কার?

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে কার্যাদেশে অংশ নেওয়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বসুন্ধরা এলাকার দস্তগীর চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি একটি উড়ো চিঠি পাঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। কাজ পাওয়ার জন্য যে রিভ সিস্টেমের পক্ষে তদবির করেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায়, উড়ো চিঠিতে সেই রিভের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মূল্যায়ন কমিটির চূড়ান্ত বিবেচনায় প্রথম হওয়া প্রতিষ্ঠান লিডস করপোরেশন ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ানের নাম নেই সেই চিঠিতে।

লিডস করপোরেশ ও ড্রিম সেভেনটি ওয়ানের দাবি, রিভকে কাজ দিতে না পেরেই মন্ত্রণালয়ের কেউ উড়ো চিঠি লিখে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। দরপত্রে অংশ নেওয়া অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সন্দেহ, উড়ো চিঠির কাজটি মন্ত্রণালয়েরই এক কর্মকর্তার। মূলত অনিয়মের অভিযোগ তুলে দরপত্র বাতিল করতেই ওই উড়ো চিঠি পাঠানো হয়।

কার্যাদেশে অংশ নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানই নাম-ঠিকানা বিহীন কোনো চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি বলে জানিয়েছে সারাবাংলাকে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কেউ প্রতিবাদও পাঠিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সিনটেক সলিউশন লিমিটেডের লেখা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘…..আমরা মন্ত্রণালয়ের ইনটিগ্রেটেড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফর মিনিস্ট্রি অব চট্টগ্রাম হিল ট্রাক্টস’ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করি। কিছুদিন আগে প্রকল্পটির ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং মূল্যায়নের ফলে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সূত্র মারফত জানতে পেরেছি যে আমাদের কোম্পানির নাম ব্যবহার করে চিঠি দেওয়া হয়েছে যে আমরা ফলাফলে আপত্তি প্রকাশ করেছি। এ ধরনের চিঠির সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ধরনের চিঠিতে সিনটেক সলিউশন লিমিটেডের নাম ব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্তের অনুরোধ করছি।’

জানতে চাইলে সিনটেক সলিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কোনো বেনামি চিঠি পাঠাইনি। সব কয়েকটি কোম্পানির নাম উল্লেখ করে একটি বেনামি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। আমাদের নাম ব্যবহার করে চিঠি পাঠানোয় আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, আমরা এ রকম চিঠির সঙ্গে জড়িত নই।’

সারাবাংলাকে বিজনেস অটোমেশনের পরিচালক শোয়েব আহমেদ মাসুদও জানান, তারাও কোনো বেনামি চিঠি পাঠাননি।

ডেভনেট’র চেয়ারম্যান সাব্বির মাহবুব এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যদি চিঠি দিতাম তাহলে আমাদের অফিশিয়াল প্যাডেই দিতাম। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা জানিয়েছি, এমন চিঠির সঙ্গে আমরা যুক্ত নই।’

জানতে চাইলে টেনকো ভিসতার পরিচালক নাভিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে আমরা জানিয়েছি, আমরা কোনো উড়ো চিঠি দেইনি। যদি চিঠি দিতেই হতো, তবে তো আমাদের অফিসিয়াল প্যাডেই চিঠি দিতাম।’

যে রিভ সিস্টেমের জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায় তদবির করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই রিভ সিস্টেমও এই চিঠি পাঠায়নি বলে জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আজমত ইকবাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘টেকিনিক্যাল কমিটিতে কম নম্বর পাওয়ায় আমরা কাজ পাইনি। কিন্তু কোনো উড়ো চিঠি আমরা দিইনি।’ আর যে দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ পেয়েছিল, তাদের দাবি— কাজের পরিবেশ নষ্ট করতেই এমন উড়ো চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির সঙ্গে খোদ মন্ত্রণালয়েরই কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

উড়ো চিঠিতে যে কর্মকর্তাকে দুর্নীতিপরায়ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সারাবাংলাকে সেই অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই উড়ো চিঠি দিয়েছে। আমিও ব্যক্তিগতভাবে ওই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কেউ চিঠি দেয়নি বলে আমাকেও জানিয়েছে।’ আর দৃঢ়তার সঙ্গেই সারাাবাংলাকে তিনি বলেছেন, তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। প্রতিটি কোম্পানিই তার মূল্যায়নে সন্তুষ্ট ছিল।

উড়ো চিঠিটি মন্ত্রণালয়েরই কেউ লিখেছে এবং এ ক্ষেত্রে চিঠির সঙ্গে উপসচিব কাজী মোখলেছুর রহমানের জড়িত থাকার যে অভিযোগ, তা তিনি অস্বীকার করেছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘চিঠি আমি পাঠাইনি। ছয় কোম্পানিই যদি এই চিঠির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকে, তাহলে তো এটি উড়ো চিঠি। মন্ত্রণালয় কেন এটি গ্রহণ করেছে, তা আমার জানা নেই।’

আর উড়ো চিঠির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রমা রানী রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘কে লিখেছে, কী লিখেছে, মন্ত্রণালয়ের কেউ লিখিয়েছে কি না— এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

মানা হয়নি দরপত্র বাতিলের নিয়ম

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই দরপত্র বাতিল করার সময়ও নিয়ম মানা হয়নি। কোন কোন কারণে দরপত্র বাতিল করা যাবে— তা পিপিআর ২০০৮ (পার্ট ৪)-এর ৩১ পৃষ্ঠায় স্পষ্টভাবে বলা আছে। তাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো কারণে সরকার নির্ধারিত বাজেটের চাইতে সর্বনিম্ন দরদাতার আর্থিক প্রস্তাব বেশি আসে অথবা পর্যাপ্তসংখ্যক প্রস্তাব না আসে অথবা নির্ধারিত সময়ের ভেতর দরদাতারা যদি পণ্য অথবা সেবা সরবরাহ করতে না পারে অথবা টেন্ডার বিজয়ী কোম্পানি যদি পেশাগত অসাদাচারণ ধরা পড়ে, তাহলেই কেবল টেন্ডার বাতিল করা যায়। দরপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে এই চারটির কোনোটিই ঘটেনি।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে যে দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ পেয়েছিল তার একটি ড্রিম সেভেনটি ওয়ানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশাদ কবির সারাবাংলাকে বলেন, খসড়া চুক্তিপত্র করার পরও টেন্ডার বাতিল করার বিষয়টি আমাদের জন্যে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়ে বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আবেদন জানিয়েছি।

মন্তব্য জানতে চাইলে দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, তদবির করেছেন— এমন কথা একজন অতিরিক্ত সচিব বলতে পারেন না। তদবির করেছেন, আবার প্রকাশ্যে সেটা বলেছেনও— এটা মারাত্মক অন্যায়। এটি সরকারি বিধিবহির্ভূত কাজ। কর্তৃপক্ষের তা অবশ্যই নজরে আনা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এই দরপত্রের পুরো বিষয়টিই আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। যে কোম্পানিটিকে কার্যাদেশ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, দুইপক্ষের যোগসাজশেই হয়তো ওই উড়ো চিঠি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে উড়ো চিঠিই গ্রহণ করার কথাই নয়। সেই চিঠির ভিত্তিতে কার্যাদেশ বাতিল হয়ে থাকলে তা খুবই অন্যায় হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন