বিজ্ঞাপন

উত্তর প্রজন্মের কণ্ঠে ভেসে বাংলা মিলেছে স্মৃতির মিনারে

February 21, 2021 | 8:49 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তিন বছরের ছোট্ট শিশু রায়হান। বাবা-মায়ের হাত ধরে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকা থেকে সকালেই স্মৃতির মিনারে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। সঙ্গে এসেছে তার আরও চার মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন মোমতাহিনা হক তাসমি (৫), মুশমুমাম তাসদিদ (৬), তাসনিয়া আফিয়া তুবা (৮) ও রামিশা মার্জিয়া তুফা (৭)।

বিজ্ঞাপন

শহিদ মিনারে এসে ছোট্ট শিশু রায়হান এদিক-ওদিক ছুটে যাচ্ছে। আর প্রাণোচ্ছ্বল হাসিমুখে খেলছে রৌদ্র-ছায়া। কখনও আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে মানুষজনকে দেখছে। আবার কখনও হাতে ফুল নিয়ে শহিদ বেদিতে এগিয়ে যাওয়া পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকছে। শিশু রায়হানের এমন ছুটাছুটি আর নির্বাক চাহনি কিছুক্ষণ পর পর থামে তার পাশে এসে দাঁড়ানো অন্য ভাইবোনদের উপস্থিতে।

তাদের এমন প্রাণোচ্ছ্বল ছুটাছুটি একটু দূর থেকে ক্যামেরা বন্দি করছিলেন মা রওনক জাহান ও তার ভাই বেলাল হোসেন। সন্তানদের এমন প্রাণোচ্ছ্বল ছুটাছুটিতে তারাও যেন ভীষণ খুশি। কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানালেন তারা। তারা বলেন, করোনার কারণে অনেকদিন ঘরের বাইরে নেওয়া হচ্ছিল না ওদের। আজ তারাই বলল, এখানে আসবে। তাই নিয়ে এলাম।

বিজ্ঞাপন

এই করোনার সময় শিশুদের নিয়ে ভিড়ের মধ্যে আসতে কোনো শঙ্কা কাজ করছে কিনা? এমন প্রশ্ন করলে মোমতাহিনা হক তাসমি ও মুশমুমাম তাসদিদের বাবা বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাতো হয়-ই। তবুও শিশুদের জন্য একটু সময় বের করতে হবে। তার চেয়ে বড় কথা- করোনায় দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর গতকাল তারাই আবদার করল এখানে আসবে। আজ সকাল হতে না হতেই প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের তাড়া দিচ্ছিল। তাই নিয়ে এলাম।’

শিশুদেরকে শহিদ মিনারে নিয়ে আসতে পেরে বাবা হিসেবে অনেক বেশি আনন্দিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে আমরা সবসময় শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য গুরুত্ব বেশি দিয়েছি। কিন্তু ৫২, ৭১-এর ইতিহাস ও চেতনা থেকে বাচ্চাদের আলাদা রাখতে চাই না। বাবা হিসেবে চাই, আমার বাচ্চারা দেশের ইতিহাসের সঙ্গে, সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকুক। দেশ, দেশের ভাষা, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। সেই জায়গা থেকে আজ তাদের আবদারে আমি না করতে পারিনি।’

অনেকটা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘আমরা ছোটবেলা স্কুলে-কলেজে এসব দিবসগুলো পালন করতাম। কিন্তু এখন যখন আমাদের বাচ্চারাও এসব দিবসের প্রতি আগ্রহী তখন বাবা হিসেবে সত্যিই গর্ব হয়। বাবা হিসেবে সব সময় চাইব- প্রত্যেকটা বাচ্চার মাঝেই যেন বায়ান্নর ভাষা শহিদ, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা অবিরাম থাকে।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় শিশুদের প্রাণোচ্ছ্বলতায় অনেক খুশি জানিয়ে তাসনিয়া আফিয়া তুবা, রামিশা মার্জিয়া তুফা ও তৌসিফ আব্দুল্যাহ রায়হান এর মা রওনক জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতেই প্রস্তুতি নিয়ে ছিল তারা। সকাল হতে না হতেই শহিদ মিনারে আসার জন্য তাড়া দিচ্ছিল আমাদের। তাই ছুটির দিনে অন্যকোনো দিকে না গিয়ে এখানেই এলাম। এখানে এসে তারা জানতে চাইছে- শহিদ মিনার কী? একুশে ফ্রেবুয়ারি কী? এসব প্রশ্নের মাঝেই তো তারা দেশ, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিখবে। একজন মা হিসেবে এটা অনেক গর্বের বিষয়। আমি বাচ্চাদের মুখে এমন প্রশ্নে সত্যি আশ্বানিত যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে দেশের ইতিহাস এভাবেই ছড়িয়ে যাবে।’

শুধু শিশু রায়হান কিংবা তার অন্য ভাই বোনেরাই নয়, শহিদ বেদিতে করোনার ভয় উপেক্ষা কর আরও অনেক শিশুই এসেছে তাদের প্রিয় বাবা-মা কিংবা স্বজনদের হাত ধরে শ্রদ্ধা জানাতে। এমনই এক শিশু রাফিয়া খানম। সরকারি চাকুরিজীবী বাবা সকালে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শহিদ মিনারে আসবেন। তা দেখে রাফিয়াও বায়না ধরেছে সেও আসবে স্মৃতির মিনারে। তাই বাবা হিসেবে না করতে পারেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাফিয়ার বাবা মহসিন আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ভয়ে প্রথমে আনতে চাইনি। কিন্তু আমার স্ত্রীই বলল নিয়ে আসতে। এখন সে এখানে (শহিদ মিনার) এসে আনন্দে যেন আত্মহারা। জিজ্ঞেস করছে বাবা এত মানুষ কেন? এত ফুল কেন? শহিদ মিনারের গোল বৃত্তটা দেখিয়ে বলছে বাবা ওগুলো রক্ত? তার এমন প্রশ্ন শুনে ভাবতেই ভালো লাগছে যে, সে আসলে জানতে চাইছে আমার বাংলা ভাষার ইতিহাস, আমার বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে।’

একথা বলেই চশমার ফাঁকে তিনি একটু করে চোখ মুছলেন। সম্ভবত ভাষা কিংবা শহিদদের প্রতি তার আবেগ হৃদয় থেকে এক ফোঁটা অশ্রু হয়ে চোখের কোণে জমেছিল। হয়তো এটি আগামী প্রজন্মের কাছ থেকে তার প্রত্যাশিত আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।

তবে তিনি ছবি না তুলতে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমি তো এখানে ফটোসেশন করতে আসিনি। এসেছি ভাষা-দেশ, সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার জানান দিতে। আর সেটি কেন ছবি তুলে জানান দিতে হবে..!

সারাবাংলা/এসএইচ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন