‘রিমান্ডে বিধর্মী-অবিশ্বাসীদের দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাবেন না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আলেম-ওলামাদের’ সহজে গ্রেফতারের জন্য সরকার লকডাউন এক সপ্তাহ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। রিমান্ডে নেওয়ার ‘আলেম-ওলামাদের’ বিধর্মী ও ধর্মে অবিশ্বাসীদের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ না করানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন বাবুনগরী।

সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী এসব কথা বলেন। হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব ইন’আমুল হাসান ফারুকী এই বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

এর আগে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় হতাহত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডবের পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন নেতা এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।

বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন করোনা পরিস্থিতির কারণে নিজ গৃহে বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন জুলুম চলছে মসজিদ, মাদরাসা, হিফজখানা ও এসব প্রতিষ্ঠানের হেফাজতকারীদের ওপর। রমজানের এই পবিত্র মাসে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও প্রতিহিংসা পরিহার করার শিক্ষা যখন ইসলাম আমাদেরকে দেয়, তখন সরকার ইসলাম প্রচারকদের বন্দি করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করছে। আমার সহকর্মীরা হাজতের নোংরা পরিবেশে স্বাচ্ছন্দে গোসল-অজু, নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত করতে এবং সেহেরি ও ইফতার খেতে পারছেন না। এসব জুলুম, বর্বরতা, মানবতার অপমান দেখে আল্লাহ নাখোশ হবেন।’

‘লকডাউন’ এক সপ্তাহ বাড়ানোর বিষয়ে বাবুনগরী বলেন, ‘গণপ্রতিরোধ ও প্রতিবাদ ছাড়া সহজে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের জন্য লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে সরকার দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের গরীব মানুষকে আর হয়রানি ও কষ্ট না দিয়ে আমার কাছে তালিকাটা পাঠান, আমি অভিযুক্তদের সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জেলে চলে যাব, একজন পুলিশও পাঠাতে হবে না। এর বিনিময়ে আপনারা লকডাউন তুলে নিন। লকডাউনের অজুহাতে জোর-জবরদস্তি করে যেসব মাদরাসা ও হেফজখানা বন্ধ করে কুরআন-হাদিসের চর্চা বন্ধ করে দিয়েছেন, ওগুলো খুলে দিন, যেন কুরআন-হাদিসের ব্যাপক চর্চার বরকতে দেশের ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।’

হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোকে মিথ্যা দাবি করে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামীর আন্দোলন সবসময়ই শান্তিপূর্ণ ছিল এবং ভবিষতেও থাকবে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করা দেশবাসীর সাংবিধানিক অধিকার। কোনো সরকারই জনগণের এই মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। কথিত তাণ্ডব ও ভাঙচুরের অভিযোগে সারাদেশে গত আট বছরে যত মামলা হয়েছে, তার সবই অবৈধ, ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা।’

বিনা শর্তে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ এসব মিথ্যা মামলা বাতিল করে কারাবন্দিদের মুক্তি দাবি করে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে রিমান্ডে নেওয়া আলেম-ওলামাদেরকে বিধর্মী ও অবিশ্বাসীদের দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করাবেন না। তারা খুবই নিষ্ঠুর ও অপমানজনক আচরণ করছে। মহান আল্লাহ্ এসব বরদাশত করবেন না।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর