বিজ্ঞাপন

সিরামের ভ্যাকসিনের খবর নেই, খোঁজা হচ্ছে অন্য উৎস

April 22, 2021 | 11:33 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এতে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বলা হচ্ছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিশ্বে এখন করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। আর এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রতিটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা জরুরি। এরই মধ্যে বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চলমান থাকলেও মজুত বেশি না থাকায় এটি অব্যাহত রাখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভ্যাকসিনের কোনো চালানও আসেনি দেশে। কবে নাগাদ নতুন চালান আসতে পারে, তেমন কোনো তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে তিনিও বলতে পারছেন না ভারত থেকে কবে নাগাদ আসতে পারে ভ্যাকসিনের নতুন চালান। আর তাই ভ্যাকসিনের জন্য ভারত-নির্ভর না থেকে অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনায় যাওয়ার উদ্যোগ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।

দেশে ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহ থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্যাটেন্টে তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে দেশে। এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। তাদের কাছ থেকেই তিন কোটি ভ্যাকসিন কিনতে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয় গত বছরের নভেম্বরে। চুক্তি অনুযায়ী, সিরাম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশকে মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা।

এর মধ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি জানুয়ারি মাসে প্রথম চালানে ৫০ লাখ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ লাখ মোট ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। আর ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। সব মিলিয়ে সরকারের হাতে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। কিন্তু গত দুই মাসে ভ্যাকসিনের কোনো চালান-ই পাঠায়নি সিরাম। কবে পাঠাবে সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে। এদিকে এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রায় ৭৫ লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখনই সিরাম থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়া গেলে চলমান ভ্যাকসিন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাই মজুত শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন সরবরাহে বিশ্বের অন্যান্য উৎসের দিকে মনযোগ দিচ্ছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, শুধু ভারত নির্ভরতায় না থেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন থেকে ভ্যাকসিন পেতে জোরেশোরে তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের ভ্যাকসিন পাওয়ার নতুন কোনো তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। কবে আসবে তাও জানি না। প্রতিনিয়তই সিরামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী সিরামের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাকি ভ্যাকসিন পেতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভ্যাকসিনের উৎস খোঁজা হচ্ছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি, চীনের সিনোফার্ম ও —যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য আগেই যোগাযোগ করেছিল দেশগুলো।’

এদিকে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। ওই কমিটি ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করবে। তারপর সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা করবে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওই কমিটি ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজ-খবর রাখবে। কোথায় থেকে ভ্যাকসিন আগে পাওয়া যেতে পারে তা জানাবে। যারা সরবরাহকারী তাদের সঙ্গে কথা বলবে। কবে দিতে পারবে, সব মিলিয়ে কত সময় লাগবে— এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। তবে সবকিছুই ইতিবাচক। আলোচনা যেহেতু শুরু হয়েছে তখন উপায় বের হবেই।’ তিনি জানান, ইতোমধ্যে রাশিয়া ও চীন ভ্যাকসিন দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। দু’দিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও গণমাধ্যমে বলেছিলেন, তৎপরতা চালানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হবে না।

বর্তমানে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন মজুত আছে, তা একমাসের শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে না পারলে এই কার্যক্রম ব্যহত হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভ্যাকসিন কমে যাচ্ছে বলেই অন্য সোর্স খুঁজছি। সিরাম ভ্যাকসিন দিতে প্রস্তুত। তারা ভারত সরকারের অনুমতি পেলেই ভ্যাকসিন পাঠাবে। তবে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যেন কোনো বিরতি তৈরি না হয়, সেজন্যই অন্য দেশ থেকে আনার চেষ্টা চলছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন যা আছে তা দিতে থাকব। আনার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করে যদি তাড়াতাড়ি পেয়ে যাই তাহলে বিরতি পড়বে না। আগেও চেষ্টা করে পেয়ে গেছি। এবারও পাব। দ্রুত অন্য সব সোর্স খোঁজা হচ্ছে। এবং তা জোরেশোরেই হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তবে তাপমাত্রা সমস্যার কারণে ফাইজারের ভ্যাকসিন আনা যাবে না বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবেশ পরিস্থিতি ও সক্ষমতা বিবেচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন