বিজ্ঞাপন

রাজ-পরীর ঘর আলো করে তিন সন্তান

May 10, 2021 | 8:16 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ দম্পতি রাজ-পরীর ঘর আলো করে এসেছে তিন ছানা। তিনজনই সুস্থ আছে। তবে চিড়িয়াখানায় বাঘিনী জয়ার ঘরে ঘটেছে একটি দুর্ঘটনা। সদ্যোজাত তার দুই ছানাই মারা গেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজ-পরীর ঘরে তিন শাবক জন্ম নেয় গত বৃহস্পতিবার (৬ মে)। আর জয়ার ঘরে দুই শাবক আসে পরদিন শুক্রবার এবং মারা গেছে গত রোববার।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে জানান, বাঘিনী পরী গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে একে একে তিন শাবকের জন্ম দেয়। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। বাচ্চাগুলো সুস্থ আছে। দুধ খাচ্ছে। এগুলোর ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজির মধ্যে। তবে এখনো সেগুলোর লিঙ্গ নির্ধারণ করতে তারা সক্ষম হননি।

শুভ বলেন, ‘বাঘিনী পরী এখনো হিংস্র আচরণ করছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা কাছে যেতে পারছি না। তবে আমাদের নজরদারিতে আছে। আস্তে আস্তে আমরা সেগুলোকে পরিচর্যা শুরু করব।’

বিজ্ঞাপন

জয়া দুই ছানার জন্ম দেয় গত শুক্রবার গভীর রাতে। পরদিন শনিবার সকালে চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা খাঁচায় বাচ্চা দুটিকে দেখেন। তবে রোববার সকালে সেগুলোকে খাঁচায় তারা মৃত অবস্থায় পান বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার এই কর্মকর্তা।

ডা. শুভ বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের পর বাঘিনীর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমন কিছু কন্ডিশন দেখা যায়, যখন সে সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকে, তখন হিংস্র আচরণ করে। সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা দুধ না পেলে শাবক বাঁচে না। এছাড়া সদ্যোজাত শাবককে মা বাঘ বডি ম্যাসেজের মতো করে সাধারণত জিহ্বা দিয়ে চাটে। এতে তার রক্ত সঞ্চালন গতি পায়, মাংসপেশি সচল হয়। কিন্তু জন্ম দিয়েই জয়া শাবকগুলো থেকে দূরে সরে যায়। পরিচর্যা এবং দুধের অভাবে শাবকগুলো মারা গেছে বলে আমাদের ধারণা।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর বাঘিনী জয়া’র ঘরে জন্ম নিয়েছিল তিন শাবক। পরদিন একটি শাবক এবং ১৮ নভেম্বর আরও একটি মারা যায়। মুমূর্ষ অবস্থায় থাকা আরেকটির প্রাণ রক্ষায় নিজের হেফাজতে নেন ডা. শুভ। এর নাম দেন বাইডেন। নিজের হেফাজতে নিয়ে বাঘিনী জয়ার শাবককে নিজের অফিসকক্ষেই রাখেন শুভ। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে নিজেই ফিডারে করে দুধ খাওয়ান। কাপড়-বল দিয়ে দিনের নির্দিষ্ট সময় বাঘ শাবকটির সঙ্গে খেলাধুলায় কাটান চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এভাবে আস্তে আস্তে শঙ্কামুক্ত হয়ে সজীব ও চঞ্চল হয়ে ওঠা বাইডেনকে গত ২১ এপ্রিল খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩৩ লাখ টাকায় কেনা ১১ মাস বয়সী রাজ এবং ৯ মাস বয়সী পরীকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর তিনটি ছানার জন্ম হয়। যার মধ্যে দুটি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’, অন্যটি কমলা-কালো ডোরাকাটা। পরদিন একটি সাদা বাঘ শাবক মারা যায়। অন্য সাদা বাঘিনীটি ‘শুভ্রা’। কমলা-কালো বাঘিনীটির নাম দেওয়া হয় ‘জয়া’। শুভ্রা বাংলাদেশে প্রথম সাদা বাঘ।

এরপর ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজ-পরীর সংসারে দু’টি শাবকের জন্ম হয়। পরদিন একটির মৃত্যু হয়। ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে মেয়ে বাঘটির প্রাণ রক্ষা করেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। বাঘটি বেড়ে ওঠার সময়ই দেশের করোনা মহামারি শুরু হয়। মেয়ে বাঘটির নাম দেওয়া হয় ‘করোনা’।

নতুন তিনটি শাবকসহ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন মোট বাঘের সংখ্যা ৯টি বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন