বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি সাজিয়ে ফাঁসলেন চসিকের সাবেক কাউন্সিলর

June 14, 2021 | 5:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নারীকে বাংলাদেশি জাতীয়তা ও জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় কাউন্সিলর কার্যালয়ের এক কর্মী, ওই রোহিঙ্গা নারী ও তার কথিত বাবা-মা এবং একজন দালালসহ মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পরস্পরের যোগসাজশে ওই রোহিঙ্গা নারীকে জাতীয়তা ও জন্মসনদ দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

সোমবার (১৪ জুন) দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি করেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে- চসিকের ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালি, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্ত এবং ‘দালাল’ সিরাজুল ইসলাম, ২৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী অহিদা এবং তার কথিত বাবা-মা মোহাম্মদ ইসমাইল ও মেহেরজান।

বিজ্ঞাপন

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১’র উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন রোহিঙ্গা নারীকে বাংলাদেশি হিসেবে মিথ্যা পরিচয়ে ভুয়া জাতীয়তা ও জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণ হওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একজন সাবেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নারী অহিদা ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে যান। কিন্তু সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এ সময় তাকে আটক করা হয়। এক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের সফটওয়্যারে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলে গেলে সে নিজের আসল পরিচয় স্বীকার করে। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।’

দুদক অনুসন্ধানে নেমে তথ্য পায়, পাসপোর্টের আবেদনে অহিদা তার বাবা-মায়ের নাম মোহাম্মদ ইসমাইল ও মেহেরজান উল্লেখ করলেও তারা প্রকৃত বাবা-মা নন। ইসমাইল ও মেহেরজান নিজেরাই রোহিঙ্গা নাগরিক এবং সৌদিপ্রবাসী। অহিদা, ইসমাইল ও মেহেরজান- তিনজনই চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে জাতীয়তা ও জন্মসনদ পেয়েছেন এবং কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) পাবার পাশাপাশি ভোটার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাদের সবার জাতীয়তা ও জন্মসনদে কাউন্সিলর হিসেবে ইসমাইল হোসেন বালির সই আছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া চাচা সেজে অহিদাকে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যান আসামি সিরাজুল ইসলাম। দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, সিরাজুল ইসলাম মূলত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি সাজিয়ে জাতীয়তা ও জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। অহিদা, মেহেরজান ও ইসমাইলকে এসব সনদ পাইয়ে দিতে ‘দালাল’ হিসেবে কাজ করেন সিরাজুল। এছাড়া অহিদার পাসপোর্টের আবেদনের ওপর প্রত্যয়ন ও সত্যায়ন করেন সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালি।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা একে অন্যের সহায়তায় লাভবান হয়ে এবং অন্যকে অন্যায়ভাবে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় ও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য জাতীয়তা সনদ ও জন্ম সনদ তৈরি করেন এবং পাসপোর্ট ও এনআইডি পাওয়ার পথ তৈরি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।

বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন বালি নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে ২০১০ সালে ও ২০১৫ সালে দুই দফায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কেন্দ্রে ঢুকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবারের নির্বাচনে বালি জিততে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন