বিজ্ঞাপন

কঠোর লকডাউনের আগে সোমবার থেকেই বন্ধ গণপরিবহন ও মার্কেট

June 27, 2021 | 6:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে ফের কঠোর লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে এই কঠোর লকডাউন। তবে এর আগেই আগামীকাল সোমবার (২৮ জুন) থেকে নতুন করে শুরু হচ্ছে বিধিনিষেধ, যা কার্যকর থাকবে তিন দিন।

বিজ্ঞাপন

এই বিধিনিষেধের আওতায় সোমবার থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব ধরনের গণপরিবহন। একইসঙ্গে দোকানপাট ও শপিং মলও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবশেষ ১৬ জুনের নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত খোলা রাখার কথা বলা হলেও এবারে কেবল প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়ার মাধ্যমে অফিস খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, এই নির্দেশনার সঙ্গে আরও কঠোর কিছু বিধিনিষেধ যুক্ত করে তা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর করা হবে।

রোববার (২৭ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তিন দিনের জন্য পালনীয় এসব বিধিনিষেধের কথা জানানো হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার মধ্যরাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত তিন দিন এই বিধিনিষেধ প্রতিপালনের পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই কার্যকর হবে কঠোর লকডাউন, যার নির্দেশনা আসতে পারে বুধবার (৩০ জুন)।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. রেজাউল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, যেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহলের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। এছাড়া মার্কেট ও শপিং মলের পাশাপাশি বিনোদনকেন্দ্র, পর্যটন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ও রিসোর্ট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেবল খাবার বিক্রি করতে পারবে। আর সরকারি-বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান কেবল প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত রেখে চলতে পারবে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অবনতিশীল। সবশেষ ১৩ দিনে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ঠিক এক হাজার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৭ জন করে মারা গেছেন। এর মধ্যেই একদিনেই এখন পর্যন্ত রেকর্ড ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, সবশেষ দুই সপ্তাহেই  নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬১ হাজার ৪৮৪টি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৪শ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ১৮ শতাংশের বেশি।

এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ জারির সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই সুপারিশের পর শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় জানান, সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি হবে। পরে শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সোমবার থেকে সীমিত ও বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে।

আজকের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনের জন্য পালনীয় নির্দেশনাগুলো জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই তিন দিনের বিধিনিষেধের শেষ দিন বুধবার জারি করা হবে নতুন নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।

কঠোর লকডাউনে কী থাকবে, সে বিষয়ে অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। তবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, গত বছরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, ১ জুলাই থেকে ঠিক একইরকম বিধিনিষেধ কার্যকরের আদেশ আসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ১৪ এপ্রিল থেকে ঘোষণা করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। তবে পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে এসব বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। সবশেষ গত ১৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৫ জুলাই পর্যন্ত। এবারে সব ধরনের সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।।

এর মধ্যে অবশ্য করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপক হারে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ২২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। লকডাউনের আওতায় থাকা জেলাগুলো হলো—নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, গাজীপুর ও গোপালগঞ্জ। এছাড়া সীমান্তবর্তী অনেক জেলায় যেখানে সংক্রমণ বেশি, সেসব স্থানে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন