বিজ্ঞাপন

হাজারও পরিবার পানিবন্দি, ডুবেছে শত শত মাছের ঘের

July 29, 2021 | 5:40 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে বিরামহীন বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে হাজারও পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের। মৌসুমি সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন

বৃষ্টি এবং ঝড়ো হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের। অন্ধকারে বসবাস করছে গ্রামবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ- সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ চালু করতে উদাসীন।

এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার (বাগেরহাট) জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উদাসীন বা অলস নই। বিদ্যুৎ সরবারহের জন্য কাজ অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঝড়ে ২৪টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ১২টি ইনসুলেটর নষ্ট হয়েছে। ৩০০টি জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটির টানা উঠে গেছে। ২৫০টি জায়গায় বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়েছে। ফলে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। আশা করি, সন্ধ্যার মধ্যেই বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া চলতি আমন ধানের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড়ে ৯৩ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে বাগেরহাট কৃষি বিভাগ জানায়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বর্ষাকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

জেলার শরণখোলা উপজেলার তালবুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, রায়েন্দা বাজারের পূর্ব এলাকা ও বান্ধাকাটাসহ সাউথখালীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এ সব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এ ছাড়া শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর, মোরেলগঞ্জের পানগুছি, মোংলার পশুর, বাগেরহাটের ভৈরব, দড়াটানাসহ সকল নদ ও নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাগেরহাট জেলা সদরের পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ বাদশা বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনগত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। সকালে উঠে দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি। যাত্রাপুর বাজারের অনেকের দোকানের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার সড়কে পানি উঠে যায়। এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।’

বিজ্ঞাপন

হাড়িখালী এলাকার ইদ্রিস আলী ছোট বলেন, ‘শুধু বৃষ্টি নয় জোয়ার হলেই এলাকায় পানি উঠে যায়। দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। জলাবদ্ধতা নিরসনে লোক দেখানো নয় কার্যকরী উদ্যেগ নিতে হবে। যেন স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা রোধ করা যায়। না হলে মানুষের দুর্ভোগ নিরসন হবে না। এরপর জনস্বার্থে নির্মিত সুইস গেটগুলো মাছ ধরতে ইজারা দেওয়ায় জলাবদ্ধ মানুষদের আরও ক্ষতি করেছে।’ এ সমস্যা লোকাল রাজনৈতিক।

শরণখোলা উপজেলার তালতলী এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সবুর বয়াতি, আবুল হারেস খানসহ কয়েকজন জানায়, বৃষ্টির ফলে তারা ঘরে থাকতে পারছে না। তাদের ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। কখন পানি রান্না-খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে স্থানীয় সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উত্তাল বঙ্গোপসাগরে টিকতে না পেরে দুই শতাধিক মাছধরা ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

পুর্ব-সুন্দরবনের দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র মুঠোফোনে জানান, অবিরাম বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় সাগরে প্রবল ঢেউয়ে টিকতে না পেরে বেশ কিছু ফিশিংবোট দুবলারচরের মেহেরআলী, ভেদাখালী, আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া, কচিখালীসহ বনের বিভিন্ন স্থানে খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে তাদের ফিশিংবোটবহর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগের কবলে পড়েছে। দুই শতাধিক ফিশিংবোট মাছ ধরতে না পেরে মহিপুর, নিদ্রা সখিনা, পাথরঘাটাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এতে জেলে ও ফিশিংবোট মালিকরা প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েবে বলে আবুল হোসেন জানান।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাতুনে জান্নাত জানান, বিরামহীন বৃষ্টিতে উপকুলীয় উপজেলা শরণখোলায় অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।

বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমন মৌসুমে রোপা চারার বীজতলা পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। আর মৌসুমি সবজি ক্ষেতের পানি সরে গেলেও ফসলের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, বিরামহীন বৃষ্টিতে সদর ও রামপাল উপজেলার অসংখ্য চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের তালিকা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দিতে প্রতিটি উপজেলার ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন